প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: স্বামীর সঙ্গে মিলে মায়ের শতকোটি টাকার সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় বগুড়ার এক দম্পতির জামিন আবেদন করার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
তারা কোনো আদালতে আগামী চার মাস জামিন আবেদন করতে পারবেন না বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের একাধিক বেঞ্চে করা জামিন আবেদনের তথ্য গোপন করে নতুন করে জামিন আবেদন করায় তা প্রতারণা হিসেবে গণ্য করে এ আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। আসামিদের জামিন আবেদন সরাসরি খারিজ করে এ আদেশ দেন আদালত।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
যাদের ক্ষেত্রে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, বগুড়ার সরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিক শেখ সরিফ উদ্দিনের বড় মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানা খানম আঞ্জুয়ারা ও তার স্বামী আনোয়ার হোসেন রানা ওরফে ক্যালা।
জানা যায়, বগুড়ার সরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিক শেখ সরিফ উদ্দিনের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী দেলওয়ারা বেগম সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দেখভাল করছিলেন।
কিন্তু অসুস্থ ও বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে তিনি তার বড় মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানা খানম আঞ্জুয়ারা ও তার স্বামী আনোয়ার হোসেন রানা ওরফে ক্যালাকে পারিবারিক সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য মৌখিকভাবে সম্মতি দেন।
পরবর্তীকালে মেয়ে ও জামাতা ভয়ভীতি জোর করে দেখিয়ে দেলওয়ারা বেগমের কাছ থেকে স্ট্যাম্প, ব্যাংকের চেক, এফডিআর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র নিয়ে নেন।
এছাড়া কিছু কাগজপত্র তৈরি করে ব্যাংক থেকে প্রায় একশ কোটি টাকা তুলে নেন তারা। এ ঘটনায় গতবছর ৫ অক্টোবর মেয়ে ও জামাতাসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন দেলওয়ারা বেগম।
এ মামলার পর গতবছর ১১ অক্টোবর হাইকোর্টে হাজির হয়ে আগাম জামিনের আবেদন করেন ওই দম্পতি। কিন্তু আদালত তাদের জামিন না দিয়ে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।
ওই নির্দেশে তারা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গতবছর ২৫ অক্টোবর জামিন আবেদন খারিজ করে স্বামী-স্ত্রীকে কারাগারে পাঠান।
এরপর গতবছর ৩ ডিসেম্বর জেলা ও দায়রা জজ আদালত আসামিদের জামিন আবেদন খারিজ করে দেন। এ অবস্থায় ডিসেম্বরেই হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন ওই দম্পতি।
এ আবেদনে বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিম ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের হাইকোর্ট বেঞ্চ কেন জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
এই রুল বিচারাধীন থাকার তথ্য গোপন করে ওই দম্পতি বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি খোন্দকার দিলিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে জামিন আবেদন করেন।
কিন্তু শুনানি না করেই ওই আবেদন ফেরত নেন তারা। পরবর্তীতে গত ২৮ জানুয়ারি বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে রুল শুনানি না করে জামিন আবেদন প্রত্যাহার করে নেন আসামিপক্ষ।
এই দুটি বেঞ্চে জামিন চাওয়ার তথ্য গোপন করে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আসায় এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।