1. [email protected] : bijoy : bijoy Book
  2. [email protected] : News Room : News Room
  3. [email protected] : news uploader : news uploader
  4. [email protected] : prothombarta :
কঠোর নিরাপত্তা বলয় রাজধানী জুড়ে
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:৩৭ রাত

কঠোর নিরাপত্তা বলয় রাজধানী জুড়ে

  • পোষ্ট হয়েছে : শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২২

প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। সমাবেশকেন্দ্রিক নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে ডিএমপির ২৫ হাজারের বেশি সদস্য।

 

এছাড়া মাঠে আছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বিপুলসংখ্যক সদস্য। রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। গত কয়েকদিনের তুলনায় শুক্রবার তল্লাশি তৎপরতা ছিল অনেক বেশি। রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল এবং লঞ্চঘাটে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে র‌্যাব-পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।

 

অনেকটা ফাঁকা অবস্থায় রয়েছে রাজধানীর অলিগলিসহ আবাসিক হোটেলগুলো। অপরদিকে গত ১ ডিসেম্বর থেকে পুলিশ যে অভিযান শুরু করেছে সেটিও অব্যাহত আছে। এ অভিযান চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তল্লাশি কার্যক্রমের অংশ হিসাবে যাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপ এবং মেসেঞ্জার গ্রুপ চেক করছে পুলিশ। পুলিশের অতিরিক্ত তৎপরতার কারণে যাত্রীদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা আতঙ্ক।

 

এ কারণে বাসগুলোতে যাত্রী কম। শুধু তাই নয়, সড়ক-মহাসড়কেও শুক্রবার যানবাহন ছিল স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম। শুক্রবার দুপুরের পর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ডিএমপি। এর পরপরই সেখানকার নিয়ন্ত্রণ নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

 

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পদস্থ কর্মকর্তারা সেখানে যান। পোশাকি এবং সাদা পোশাকি পুলিশ সদস্যরা সেখানে গড়ে তুলেছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয়। এ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই সেখানে ইতোমধ্যে জড়ো হয়েছেন বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী।

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর রেল-বাস স্টেশনসহ বিভিন্ন সড়ক, অলিগলিতে পুলিশের তল্লাশি চলছে। যানবাহনে ব্যাগ-শরীর তল্লাশির পাশাপাশি কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাবেন-কী কারণে ইত্যাদি বিষয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞেস করছে পুলিশ। তল্লাশির কারণও জানতে চান অনেক পথচারী।

 

অনেকের মধ্যে চরম বিরক্ত প্রকাশ করতেও দেখা গেছে। তাদের অভিযোগ, অনেকে রাজনীতি করে না। জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা আসছেন কিংবা ঢাকা থেকে বের হতে রাস্তায় বের হয়েছেন।

 

সবাইকে ঢালাও তল্লাশির কারণে, অনেককে পুলিশের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করতে দেখা গেছে। সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অল্প পরিমাণ যান চলাচল করে। ঢাকা থেকে বের হওয়া বিভিন্ন যানও তল্লাশির মুখে পড়ছে।

 

যাত্রীদের ভাষ্য, নিরাপত্তাজনিত কারণে পুলিশ তল্লাশি চালাতেই পারে। কিন্তু তল্লাশির নামে পরিচয়পত্রও দেখাতে বলছে পুলিশ। সাধারণ মানুষের সঙ্গে পরিচয়পত্র সব সময় থাকে না। কিন্তু কোনো সমাবেশকে কেন্দ্র করে এভাবে ঢালাও তল্লাশি চালিয়ে সাধারণ যাত্রীদের হয়রানি করা পুলিশের উচিত নয়।

 

চটগ্রাম থেকে রেলপথে ঢাকায় আসা ট্রেনযাত্রী হিরণ মিয়া জানান, তিনি গত দু’সপ্তাহ ধরে ঢাকা-চট্টগ্রামে আসা-যাওয়া করছেন। মা রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। শুক্রবার ভোরে কমলাপুর স্টেশন থেকে নেমে সিএনজিতে উঠতেই তল্লাশির কবলে পড়েন। সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায়, নাজেহাল হতে হয়েছে।

 

পরে সিএনজি চালকের কাগজপত্র চেক করে পুলিশ। এক পর্যায়ে তিনি দূরে সরে পড়েন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা ট্রেনযাত্রী জহির উদ্দিন। জানালেন, ঢাকায় এসেছেন পাইকারি কাপড় কিনতে। যাচ্ছিলেন ইসলামপুরে। কমলাপুর স্টেশন থেকে বের হতেই তল্লাশির মুখে পড়েন। কমলাপুর, সায়েদাবাদ, ইত্তেফাক মোড়, আরামবাগসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পথচারী, ব্যক্তিগত গাড়ি, যাত্রীবাহী বাস, লেগুনা, মোটরসাইকেল থামিয়েও তল্লাশি করছে পুলিশ।

 

কাউকে সন্দেহ হলেই অস্ত্র তাক করে তল্লাশি করছে পুলিশ। তল্লাশির কবলে পড়া অনেকে জানিয়েছেন, এমন করে তল্লাশি করায় ভয়ভীতিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ পথচারীদের। তল্লাশি থেকে বাদ যাচ্ছে না রিকশা যাত্রীরাও। ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সফিকুর রহমান বলেন, কোনো অবস্থাতেই যেন রেলওয়ে স্টেশন, সাধারণ যাত্রীদের ক্ষয়ক্ষতি না হয়- সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

 

বিনা টিকিট যাত্রী যাতে বের হতে এবং প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রবেশ ও বাহির পথে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ভুলতা ক্যাম্পের ইনচার্জ ওমর ফারুক জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সতর্ক অবস্থানে আছে পুলিশ। সন্দেহভাজন যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে।

 

বিভিন্ন যানের কাগজপত্র চেক করা হচ্ছে। রুট পারমিট আছে কিনা তাও দেখা হচ্ছে। ঢাকার প্রবেশপথ ডেমরায়ও তল্লাশি করে পুলিশ। ডেমরার সুলতানা কামাল সেতুর পশ্চিম পাড়, স্টাফ কোয়ার্টার, চৌরাস্তা, কোনাপাড়া ও ডেমরা-রামপুরা সড়কসহ অভ্যন্তরীণ এলাকাতেও পুলিশ সতর্ক অবস্থায় ছিল।

 

ডেমরা থানার অপারেশন অফিসার (ইন্সপেক্টর) সুব্রত কুমার পোদ্দার বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী কড়া সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশ। সন্দেহভাজন যাত্রীদের তল্লাশিসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও সাভারসহ রাজধানীমুখী বিভিন্ন মহাসড়কে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। তারা জানায়, জনগণের নিরাপত্তায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

 

এদিকে সড়কে যান চলাচল কম থাকায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।গাজীপুরের চন্দ্রা মোড় এলাকায় পুলিশের চেকপোস্ট কার্যক্রম ছিল লক্ষণীয়। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসাবে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসানো হয়েছে বলে জানায় কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বাশার।

 

মুন্সীগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। জেলার বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক ও নৌপথসহ গুরুত্বপূর্ণ ৮০টি চেকপোস্ট বসিয়ে চালানো হচ্ছে তল্লাশি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক, বন্দরের মদনপুর এবং সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ও মেঘনা টোল প্লাজায় পুলিশের চারটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

 

এছাড়া সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের ধউর এলাকায় নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় বিএনপির সাত লাখ লোক এসেছে বলে আমাদের কাছে তথ্য এসেছে। এ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। তিনি বলেন, সমাবেশের নিরাপত্তায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়োজিত করা হয়েছে।

 

পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশ সমন্বিতভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।  আমাদের টিম কাজ করছে। আমরা তদারকি করছি, যেন এ সমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের অরাজকতা না হয়। সে লক্ষ্যে পুলিশ কাজ করছে। তিনি বলেন, আমরা মনে করি তারা বিএনপি একটি সুন্দর সমাবেশ করবে, কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা করবে না।

 

আমরা যে সিকিউরিটি প্ল্যান করেছি, মনে করি না কোনো হামলা হবে। পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ রেখেছি, যেন দুর্বৃত্তায়নের মতো ঘটনা না ঘটে। এদিকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানিয়েছেন, বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনা করছে জামায়াতে ইসলামী।

 

শুক্রবার জুমার নামাজের পর পল্টন সমাজ কল্যাণ মসজিদের গলিতে কিছু মুসল্লি একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় তারা জামায়াতের ব্যবহার করা স্লোগান দিয়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে।

 

এই স্লোগানটি বাংলাদেশের একটি নিষিদ্ধ দলের স্লোগান। তার মানে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ঐক্য আছে। এখন যে-ই নাশকতার পরিকল্পনা করুক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কোনো দুষ্কৃতকারী, নাশকতাকারী অথবা জামায়াত-শিবিরকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।

Facebook Comments Box

শেয়ার দিয়ে সাথেই থাকুন

print sharing button
এ বিভাগের অন্যান্য খবর