ঢাকা , শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারত ও পাকিস্তান ২০১৯ সালে পারমাণবিক সংঘাতের প্রস্তুতি নিয়েছিল: মাইক পম্পেও

  • পোষ্ট হয়েছে : ০৬:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৩৮ বার দেখা হয়েছে
প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন,  ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ বাধার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ২০১৯ সালে বালাকোট বিমান হামলার পর।

 

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলা হওয়ার পর পাকিস্তানের ভূখণ্ডে বিমান হামলা করে ভারত। ওই সময় পাকিস্তান একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে পাইলটকে আটক করেছিল।

 

ভারত ও পাকিস্তান দুটি দেশই পুরো কাশ্মীর দাবি করলেও এর কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। ভারত দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাশ্মীর উপত্যকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে। এই অভিযোগ ইসলামাবাদ অস্বীকার করেছে। ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা এবং ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই দেশ দুটি তিনটি যুদ্ধ করছে। শুধু একটি ছাড়া বাকি সবই কাশ্মীর নিয়ে।

 

সাবেক এই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও তার লেখা বই  ‘নেভার গিভ অ্যান ইঞ্চ: ফাইটিং ফর দ্য আমেরিকা আই লাভ’-এ লিখেছেন, বিশ্ব সঠিকভাবে জানে না যে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও পাকিস্তান পারমাণবিক সংঘাতের কতটা কাছাকাছি ছিল। তিনি আরো লেখেন, সত্যিটা হলো-আমিও সঠিকভাবে উত্তর জানি না, আমি শুধু জানি এটি খুব কাছাকাছি ছিল।

 

পম্পেও বলেছেন, ‘তিনি কখনো সেই রাতটি ভুলবেন না।’ পম্পেও জানান, তিনি তখন ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে অবস্থান করছিলেন। পরমাণু অস্ত্র নিয়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে একটি শীর্ষ বৈঠকে ছিলেন। তখন ভারত ও পাকিস্তান উত্তরের কাশ্মীর সীমান্তে কয়েক দশক ধরে চলে আসা বিরোধের জেরে একে অপরকে হুমকি দেওয়া শুরু করেছিল। ভারতীয় সৈন্যদের ওপর হামলা হয়েছিল এবং ৪০ জনেরও বেশি সৈন্যকে হত্যা করা হয়েছিল। পম্পেও লিখেছেন, ‘একটি ইসলামী সন্ত্রাসী হামলা… সম্ভবত পাকিস্তানের শিথিল সন্ত্রাসবিরোধী নীতির কারণে এটি সম্ভব হয়েছিল।’

 

পম্পেও উল্লেখ করেন, ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল।  পাকিস্তানিরা একটি ভারতীয় বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করে এবং একজন ভারতীয় পাইলটকে বন্দি করে রাখে।

 

পম্পেও লিখেছেন, তিনি হ্যানয়ে একজন ভারতীয় ‘প্রতিপক্ষ’-এর সঙ্গে কথা বলার জন্য ওই রাতে জেগে ছিলেন। যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তার বিশ্বাস ছিল, পাকিস্তানিরা পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করতে শুরু করেছে হামলার জন্য। তিনি পম্পেওকে আরো জানান, উল্টো ভারতীয়রাও পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পম্পেও আরো লিখেছেন, ‘আমি তাকে কিছু না করতে বলেছিলাম এবং কী হচ্ছে সেটা বোঝার জন্য আমাদের এক মিনিট সময় দিতে বলেছিলাম।’

 

আমি তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে কাজ শুরু করি। পাকিস্তানের ‘আসল নেতা’, তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গেও কথা বলেন বলে লিখেছেন পম্পেও। জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে কথা বলে পম্পেও বুঝতে পারেন যে তাদের বিশ্বাস, উল্টো ভারতীয়রা পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরপর নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদকে এটা বোঝাতে আমাদের কয়েক ঘণ্টা সময় লেগেছে যে কোনো পক্ষই আসলে এমন কোনো হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে না।

 

পম্পেওর এসব দাবির বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পম্পেও লিখেছেন, ভয়ানক কোনো পরিণতি এড়াতে আমরা সেই রাতে যা করেছি তা অন্য কেউ করতে পারত না।

সূত্র : বিবিসি।

ট্যাগ :

শেয়ার দিয়ে সাথেই থাকুন

ভারত ও পাকিস্তান ২০১৯ সালে পারমাণবিক সংঘাতের প্রস্তুতি নিয়েছিল: মাইক পম্পেও

পোষ্ট হয়েছে : ০৬:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩
প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন,  ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ বাধার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ২০১৯ সালে বালাকোট বিমান হামলার পর।

 

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলা হওয়ার পর পাকিস্তানের ভূখণ্ডে বিমান হামলা করে ভারত। ওই সময় পাকিস্তান একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে পাইলটকে আটক করেছিল।

 

ভারত ও পাকিস্তান দুটি দেশই পুরো কাশ্মীর দাবি করলেও এর কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। ভারত দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাশ্মীর উপত্যকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে। এই অভিযোগ ইসলামাবাদ অস্বীকার করেছে। ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা এবং ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই দেশ দুটি তিনটি যুদ্ধ করছে। শুধু একটি ছাড়া বাকি সবই কাশ্মীর নিয়ে।

 

সাবেক এই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও তার লেখা বই  ‘নেভার গিভ অ্যান ইঞ্চ: ফাইটিং ফর দ্য আমেরিকা আই লাভ’-এ লিখেছেন, বিশ্ব সঠিকভাবে জানে না যে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও পাকিস্তান পারমাণবিক সংঘাতের কতটা কাছাকাছি ছিল। তিনি আরো লেখেন, সত্যিটা হলো-আমিও সঠিকভাবে উত্তর জানি না, আমি শুধু জানি এটি খুব কাছাকাছি ছিল।

 

পম্পেও বলেছেন, ‘তিনি কখনো সেই রাতটি ভুলবেন না।’ পম্পেও জানান, তিনি তখন ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে অবস্থান করছিলেন। পরমাণু অস্ত্র নিয়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে একটি শীর্ষ বৈঠকে ছিলেন। তখন ভারত ও পাকিস্তান উত্তরের কাশ্মীর সীমান্তে কয়েক দশক ধরে চলে আসা বিরোধের জেরে একে অপরকে হুমকি দেওয়া শুরু করেছিল। ভারতীয় সৈন্যদের ওপর হামলা হয়েছিল এবং ৪০ জনেরও বেশি সৈন্যকে হত্যা করা হয়েছিল। পম্পেও লিখেছেন, ‘একটি ইসলামী সন্ত্রাসী হামলা… সম্ভবত পাকিস্তানের শিথিল সন্ত্রাসবিরোধী নীতির কারণে এটি সম্ভব হয়েছিল।’

 

পম্পেও উল্লেখ করেন, ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল।  পাকিস্তানিরা একটি ভারতীয় বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করে এবং একজন ভারতীয় পাইলটকে বন্দি করে রাখে।

 

পম্পেও লিখেছেন, তিনি হ্যানয়ে একজন ভারতীয় ‘প্রতিপক্ষ’-এর সঙ্গে কথা বলার জন্য ওই রাতে জেগে ছিলেন। যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তার বিশ্বাস ছিল, পাকিস্তানিরা পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করতে শুরু করেছে হামলার জন্য। তিনি পম্পেওকে আরো জানান, উল্টো ভারতীয়রাও পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পম্পেও আরো লিখেছেন, ‘আমি তাকে কিছু না করতে বলেছিলাম এবং কী হচ্ছে সেটা বোঝার জন্য আমাদের এক মিনিট সময় দিতে বলেছিলাম।’

 

আমি তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে কাজ শুরু করি। পাকিস্তানের ‘আসল নেতা’, তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গেও কথা বলেন বলে লিখেছেন পম্পেও। জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে কথা বলে পম্পেও বুঝতে পারেন যে তাদের বিশ্বাস, উল্টো ভারতীয়রা পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরপর নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদকে এটা বোঝাতে আমাদের কয়েক ঘণ্টা সময় লেগেছে যে কোনো পক্ষই আসলে এমন কোনো হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে না।

 

পম্পেওর এসব দাবির বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পম্পেও লিখেছেন, ভয়ানক কোনো পরিণতি এড়াতে আমরা সেই রাতে যা করেছি তা অন্য কেউ করতে পারত না।

সূত্র : বিবিসি।