1. [email protected] : bijoy : bijoy Book
  2. [email protected] : News Room : News Room
  3. [email protected] : news uploader : news uploader
  4. [email protected] : prothombarta :
কোনো ধর্ম নেই অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫১ দিন

কোনো ধর্ম নেই অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর

  • পোষ্ট হয়েছে : শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২৩

প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যতম শিক্ষা হলো নিজেদের অঙ্গীকারগুলোকে যেন পূর্ণ করা হয়। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে অঙ্গীকারগুলোর বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

 

পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যে লোক নিজ অঙ্গীকার পূর্ণ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে সে-ই মুত্তাকি। সেক্ষেত্রে নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৭৬)।

 

আল্লাহপাক আমাদের অঙ্গীকার পালনের যে নির্দেশ দিয়েছেন, এ নির্দেশের মাঝে সব অঙ্গীকারগুলো যেমন ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত অঙ্গীকার, অংশীদারভিত্তিক অঙ্গীকার, শপথের প্রতিশ্রুতি, দৃষ্টির প্রতিশ্রুত, শান্তিচুক্তি এবং বিয়ের অঙ্গীকার প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত।

 

আজকাল যত ধরনের ঝগড়া-বিবাদ, ফ্যাসাদ ও নৈরাজ্য সংঘটিত হচ্ছে এর মূল কারণ হচ্ছে অঙ্গীকার ভঙ্গ করা। মানুষ মুখে বলে একটা আর করে আরেকটা। কথা এবং কাজে যেহেতু মিল নেই, তাই ঝগড়া-বিবাদ পিছু ছাড়ে না।

 

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করার পর সে অঙ্গীকার পূর্ণ কর এবং পাকাপাকি কসম করার পর তা ভঙ্গ করো না, অথচ তোমরা আল্লাহকে জামিন করেছ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন’ (সূরা নাহল, আয়াত : ৯১)।

 

এরপর আবার বলছেন, ‘যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকারকে সুদৃঢ় করার পরও তা ভঙ্গ করে এবং যে সম্পর্ককে অটুট রাখতে আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এরাই ক্ষতিগ্রস্ত’ (সূরা আল বাকারা, আয়াত : ২৭)।

 

এখন কোন সম্পর্কগুলোকে আল্লাহতায়ালা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন তা বুঝতে হবে। এর মধ্যে প্রধান হলো আল্লাহতায়ালার সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা। তার ইবাদত করা। সর্বদা তারই সমীপে অবনত হওয়া। তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়েও তার সঙ্গে শরিক না করা। আমাদের চাকরি, আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য, আমাদের যোগ্যতা যেন তার ইবাদত থেকে বিরত না রাখে।

 

এ ছাড়া নিকটাত্মীয়, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী ও প্রিয়দের সঙ্গেও যেন এক সুসম্পর্ক সৃষ্টি করি। এমন দৃঢ় ভালোবাসা ও প্রেমের বন্ধন গড়ে তুলতে হবে যেভাবে আল্লাহতায়ালা প্রত্যাশা করেন। এমন যখন করব তখন বলা যেতে পারে, আমরা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী। যারা সম্পর্ক ছিন্নকারী তারাই মূলত পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়।

 

হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিশ্বস্ততা রক্ষা করে না, তার ইমান কোনো ইমান নয়। আর যে ব্যক্তি অঙ্গীকার রক্ষা করে না তার কোনো ধর্ম নেই’ (মুসনাদ অহমদ বিন হাম্বল, ৩য় খণ্ড)।

 

হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবি (সা.) বলেন, ‘নিজ ভাইয়ের সঙ্গে রুক্ষ আচরণ করো না এবং তার সঙ্গে অযথা তাচ্ছিল্য করে ঠাট্টা বিদ্রুপ করো না। আর তার সঙ্গে এমন কোনো প্রতিশ্রুতি করো না, যা তুমি পূর্ণ করতে পারবে না’ (আল আদাবুল মুফরিদ লি ইমামিল বুখারি)। মহানবি (সা.) বলেন, ‘মুনাফিকের তিনটি লক্ষণ রয়েছে। আলাপচারিতার সময় মিথ্যাচার করে। তার কাছে যখন আমানত রাখা হয়, তখন সে বিশ্বাসঘাতকতা করে। আর প্রতিশ্রুতি করলে তা ভঙ্গ করে’ (বুখারি)।

 

হজরত রাসূল করিম (সা.) অঙ্গীকার রক্ষার ক্ষেত্রে এত জোর গুরুত্বারোপ করেছেন যে, কোনো কোনো সময় মুসলমানদের নিদারুণ কষ্টকর সঙ্গিন অবস্থা দেখেও তিনি কখনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করেননি।

 

এক বর্ণনায় এসেছে, হুদাইবিয়ার সন্ধিতে একটি অংশ ছিল এমন যে, মক্কা থেকে যে মুসলমান হয়ে মদিনাতে চলে যাবে সে মক্কাবাসীদের বিধান অনুযায়ী তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তো ঠিক সেই মুহূর্তে যখন সন্ধির শর্তাবলি লেখা হচ্ছিল আর শেষ দস্তখত করা হয়নি এমন সময় হজরত আবু জানদাল শিকলাবদ্ধ অবস্থায় মক্কার বন্দিশালা থেকে পালিয়ে চলে এসেছিল।

 

আর রাসূল করিম (সা.)-এর কাছে ফরিয়াদ জানায় আর সব মুসলমান এ হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে শিউরে ওঠে; কিন্তু রাসূল করিম (সা.) অত্যন্ত শান্তভাবে তাকে বললেন, ‘হে আবু জানদাল! ধৈর্য ধর। আমরা অঙ্গীকার ভঙ্গ করতে পারি না। আল্লাহতায়ালা অচিরেই তোমার জন্য কোনো পথ বের করবেন’ (বুখারি)।

 

হুদাইবিয়ার সন্ধির একটি অংশ এটাও ছিল, কোনো মুসলমান পালিয়ে মদিনাতে চলে গেলে তাকে ফেরত পাঠানো হবে। এই অংশের ওপর মুসলমানরা সন্ধি বাস্তবায়নের আগেই তা পালন করে দেখিয়ে দিয়েছিল আর মক্কা থেকে পালিয়ে আগমনকারী আবু জানদালবে দ্বিতীয়বার তার বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, তাকে আবার কষ্টদায়ক বন্দিদশায় ঠেলে দেয়।

 

এভাবে বিশ্বনবি ও শ্রেষ্ঠনবি (সা.) অঙ্গীকার রক্ষা করে তার উম্মতের জন্য দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে অঙ্গীকার রক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে তা নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করার তৌফিক দিন।

লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

Facebook Comments Box

শেয়ার দিয়ে সাথেই থাকুন

print sharing button
এ বিভাগের অন্যান্য খবর