ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২৪২ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বিএসসিতে যোগ হচ্ছে আরও ৪ জাহাজ

  • পোষ্ট হয়েছে : ১২:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ নভেম্বর ২০২২
  • / ২৯ বার দেখা হয়েছে

প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়াত্ব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য নৌবহরে আরও চারটি সমুদ্রগামী জাহাজ যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এর জন্য ব্যয় হবে ২৪১.৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিএসসি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

জাহাজ চারটির মধ্যে দুটি অপরিশোধিত তেলের ট্যাঙ্কার এবং দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার। জাহাজ চারটি সরকার-টু-সরকার চুক্তির অধীনে চীন থেকে সংগ্রহ করা হবে।

অপরিশোধিত তেলের ট্যাঙ্কারগুলির প্রতিটির ক্ষমতা হবে এক লাখ ডেডওয়েট টন এবং প্রতিটি বাল্ক ক্যারিয়ারের ক্ষমতা হবে ৮০ হাজার টন।

অপরিশোধিত তেলের দুই ট্যাঙ্কার এবং বাল্ক ক্যারিয়ার দুটির দাম হবে যথাক্রমে ১৫১.৯৬ মিলিয়ন এবং ৮৯.৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এর আগে ২০১৬ সালে চীন সরকার ৬টি জাহাজ ক্রয়ের জন্য ২ শতাংশ সুদে ২০ বছরের জন্য বিএসসি-কে ১ হাজার ৫০০ কোটি কোটি টাকা প্রদান করেছিল।

বিএসসি ২০১৮ সালে তিনটি জাহাজ পেয়েছিল এবং ২০১৯ সালে আরও তিনটি জাহাজ পেয়েছিল।

বর্তমানে শিপিং কর্পোরেশনের ৮টি সমুদ্রগামী জাহাজ রয়েছে। কিন্তু এ বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আলভিয়া বন্দরে একটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বিএসসি বলেছে, ৪টি নতুন জাহাজ কেনার জন্য চীনের সঙ্গে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে এবং চুক্তির শর্তাদি ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

চুক্তি কার্যকর হলে আগামী দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে জাহাজগুলো পর্যায়ক্রমে দেশে এসে পৌঁছাবে।

এর আগে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরের ঠিক দুই বছর পর ২০১৮ সালের জুলাই মাসে দেশে আসে প্রথম জাহাজ ‘বাংলার জয়যাত্রা’।

একই বছরের অক্টোবর ও ডিসেম্বরে বিএসসি বাংলার সমৃদ্ধি ও বাংলার আরজান-এ দুটি জাহাজ পায়।

২০১৯ সালের প্রথম পাঁচ মাসে অন্য তিনটি জাহাজ দেশে এসে পৌঁছায়। জাহাজগুলো হলো- বাংলার অগ্রযাত্রা, বাংলার অগ্রদূত এবং বাংলার অগ্রগতি।

নতুন জাহাজ আসায় মুনাফায় উল্লম্ফন

বিএসসির বহরে নতুন জাহাজ যোগ হওয়ার পর থেকেই মুনাফায় উল্লম্ফন দেখছে প্রতিষ্ঠানটি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠানটির জাহাজ ভাড়াও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিএসসির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ছয়টি নতুন জাহাজ আসার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব ছিল মাত্র ৮৩ কোটি টাকা। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে এটি ছয় গুণ বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে ডিভিডেন্ডও।

২০১৯-২০ অর্থবছরে বিএসসির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ৭২ পয়সা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ইপিএস হয়েছে ৪ টাকা ৭২ পয়সা। আর সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে ইপিএস হয়েছে ১৪ টাকা ৮০ পয়সা।

অন্যদিকে, ২০২০ সালে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। পরের বছর ২০২১ সালে দিয়েছে ১২ শতাংশ ক্যাশ। আর এবছর ২০২২ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেওয়ার প্রস্তাব করেছে।

বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজের চার্টারিং চাহিদা আন্তর্জাতিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির জাহাজগুলি আমেরিকা এবং ইউরোপের প্রধান দেশগুলিতে পণ্য প্রেরণ করছে।

ইউক্রেনের আলভিয়া বন্দরে ‘বাংলা সমৃদ্ধি’ নামক জাহাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় জাহাজটি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। জাহাজটি এখনো আলভিয়া বন্দরে পড়ে রয়েছে।

তবে বিএসসি বলছে, জাহাজটি বীমা কভারেজের আওতায় রয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটির বীমার দাবি এখনো আদায় হয়নি। তবে দাবি আদায়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

১০৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ১৯৭৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠার পর দুটি সমুদ্রগামী জাহাজ কর্পোরেশনটির নৌবহরে যুক্ত হয়। যেগুলোর নাম বাংলার দূত ও বাংলার সম্পদ।

বর্তমানে কর্পোরেশনটির বহরে ৪৪টি জাহাজ যুক্ত রয়েছে। তবে জাহাজের স্বাভাবিক বার্ধক্য এবং বাণিজ্যিকভাবে অলাভজনক হওয়ার কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে ৩৬টি জাহাজ বিক্রি বা স্ক্র্যাপ করা হয়েছে। ফলে ৮টি জাহাজ বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে চালু রয়েছে।

ট্যাগ :

শেয়ার দিয়ে সাথেই থাকুন

২৪২ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বিএসসিতে যোগ হচ্ছে আরও ৪ জাহাজ

পোষ্ট হয়েছে : ১২:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ নভেম্বর ২০২২

প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়াত্ব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য নৌবহরে আরও চারটি সমুদ্রগামী জাহাজ যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এর জন্য ব্যয় হবে ২৪১.৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিএসসি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

জাহাজ চারটির মধ্যে দুটি অপরিশোধিত তেলের ট্যাঙ্কার এবং দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার। জাহাজ চারটি সরকার-টু-সরকার চুক্তির অধীনে চীন থেকে সংগ্রহ করা হবে।

অপরিশোধিত তেলের ট্যাঙ্কারগুলির প্রতিটির ক্ষমতা হবে এক লাখ ডেডওয়েট টন এবং প্রতিটি বাল্ক ক্যারিয়ারের ক্ষমতা হবে ৮০ হাজার টন।

অপরিশোধিত তেলের দুই ট্যাঙ্কার এবং বাল্ক ক্যারিয়ার দুটির দাম হবে যথাক্রমে ১৫১.৯৬ মিলিয়ন এবং ৮৯.৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এর আগে ২০১৬ সালে চীন সরকার ৬টি জাহাজ ক্রয়ের জন্য ২ শতাংশ সুদে ২০ বছরের জন্য বিএসসি-কে ১ হাজার ৫০০ কোটি কোটি টাকা প্রদান করেছিল।

বিএসসি ২০১৮ সালে তিনটি জাহাজ পেয়েছিল এবং ২০১৯ সালে আরও তিনটি জাহাজ পেয়েছিল।

বর্তমানে শিপিং কর্পোরেশনের ৮টি সমুদ্রগামী জাহাজ রয়েছে। কিন্তু এ বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আলভিয়া বন্দরে একটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বিএসসি বলেছে, ৪টি নতুন জাহাজ কেনার জন্য চীনের সঙ্গে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে এবং চুক্তির শর্তাদি ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

চুক্তি কার্যকর হলে আগামী দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে জাহাজগুলো পর্যায়ক্রমে দেশে এসে পৌঁছাবে।

এর আগে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরের ঠিক দুই বছর পর ২০১৮ সালের জুলাই মাসে দেশে আসে প্রথম জাহাজ ‘বাংলার জয়যাত্রা’।

একই বছরের অক্টোবর ও ডিসেম্বরে বিএসসি বাংলার সমৃদ্ধি ও বাংলার আরজান-এ দুটি জাহাজ পায়।

২০১৯ সালের প্রথম পাঁচ মাসে অন্য তিনটি জাহাজ দেশে এসে পৌঁছায়। জাহাজগুলো হলো- বাংলার অগ্রযাত্রা, বাংলার অগ্রদূত এবং বাংলার অগ্রগতি।

নতুন জাহাজ আসায় মুনাফায় উল্লম্ফন

বিএসসির বহরে নতুন জাহাজ যোগ হওয়ার পর থেকেই মুনাফায় উল্লম্ফন দেখছে প্রতিষ্ঠানটি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠানটির জাহাজ ভাড়াও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিএসসির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ছয়টি নতুন জাহাজ আসার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব ছিল মাত্র ৮৩ কোটি টাকা। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে এটি ছয় গুণ বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে ডিভিডেন্ডও।

২০১৯-২০ অর্থবছরে বিএসসির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ৭২ পয়সা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ইপিএস হয়েছে ৪ টাকা ৭২ পয়সা। আর সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে ইপিএস হয়েছে ১৪ টাকা ৮০ পয়সা।

অন্যদিকে, ২০২০ সালে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। পরের বছর ২০২১ সালে দিয়েছে ১২ শতাংশ ক্যাশ। আর এবছর ২০২২ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেওয়ার প্রস্তাব করেছে।

বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজের চার্টারিং চাহিদা আন্তর্জাতিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির জাহাজগুলি আমেরিকা এবং ইউরোপের প্রধান দেশগুলিতে পণ্য প্রেরণ করছে।

ইউক্রেনের আলভিয়া বন্দরে ‘বাংলা সমৃদ্ধি’ নামক জাহাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় জাহাজটি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। জাহাজটি এখনো আলভিয়া বন্দরে পড়ে রয়েছে।

তবে বিএসসি বলছে, জাহাজটি বীমা কভারেজের আওতায় রয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটির বীমার দাবি এখনো আদায় হয়নি। তবে দাবি আদায়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

১০৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ১৯৭৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠার পর দুটি সমুদ্রগামী জাহাজ কর্পোরেশনটির নৌবহরে যুক্ত হয়। যেগুলোর নাম বাংলার দূত ও বাংলার সম্পদ।

বর্তমানে কর্পোরেশনটির বহরে ৪৪টি জাহাজ যুক্ত রয়েছে। তবে জাহাজের স্বাভাবিক বার্ধক্য এবং বাণিজ্যিকভাবে অলাভজনক হওয়ার কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে ৩৬টি জাহাজ বিক্রি বা স্ক্র্যাপ করা হয়েছে। ফলে ৮টি জাহাজ বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে চালু রয়েছে।