ঢাকা , শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিঙ্গারের বিরুদ্ধে ৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ

  • পোষ্ট হয়েছে : ০৭:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুলাই ২০২৩
  • / ৬৭ বার দেখা হয়েছে

সিঙ্গারের বিরুদ্ধে ৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ

প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: পূঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের বহুজাতিক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ফের ৩৪ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ উঠেছে, কোম্পানিটির বিদেশি চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা মিলে গত কয়েক বছরে পণ্যের বৈচিত্র্য এনে ভোক্তাদের নজর কেড়েছেন। করোনা-পূর্ববর্তী ২০১৯ সালে সিঙ্গার বাংলাদেশ রেকর্ড মুনাফা অর্জন করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সরকারকে প্রাপ্ত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছে। দুই বিদেশি শীর্ষ নির্বাহীর পুকুর চুরি দেশি প্রতিষ্ঠানকেও হার মানিয়েছে।

পাশাপাশি শেয়াবাজারের বিনিয়োগকারীদের বছরের পর বছর ঠকিয়ে আসছে কোম্পানিটি। কোম্পানিটি ২০১৭ সালে ১০০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিলেও মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালে ডিভিডেন্ড নেমে এসেছে ১০ শতাংশে।

২০২১ সালেও কোম্পানিটি ৫ টাকা ২০ পয়সা মুনাফা করে ৬০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০২০ সালে ৭ টাকা ৪৫ পয়সা মুনাফা করে ৩০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল। ২০১৯ সালে ১০ টাকা ৩৫ পয়সা মুনাফা করে ৭৭ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।২০১৮ সালে ১১ টাকা ৩৬ পয়সা মুনাফা করে ৩০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল।

কিন্তু ২০২২ সালে কোম্পানিটি মাত্র ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। যার মাধ্যমে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়েছে। তাই কোম্পানিটির গত পাঁচ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই বাছাই করার দাবী জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে, বাংলাদেশে ব্যবসা করলেও বাংলাদেশের আইনকানুনকে পাত্তা না দিয়ে বছরের পর বছর বিক্রির তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন ভ্যাটের নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বড় অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকির সাতকাহন বেরিয়ে এসেছে বলে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে।

কোম্পানিটি বাংলাদেশে ব্যবসা করলেও ঠিকমতো সরকারের রাজস্ব পরিশোধ করছে না। প্রতিষ্ঠানটি গত পাঁচ বছরে ৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন ভ্যাটের নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বড় অঙ্কের এই ফাঁকির চিত্র উঠে এসেছে।

এছাড়া শুধু রাজস্ব ফাঁকি নয়, অবৈধভাবে রেয়াতি সুবিধাও নিয়েছে সিঙ্গার বাংলাদেশ। একই সাথে অবৈধভাবে রেয়াতি সুবিধায় নেওয়ার প্রমান পেয়েছে, এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে ভ্যাটের নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে।

এনবিআর জানিয়েছে, গত ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে ৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয় সিঙ্গার বাংলাদেশ। কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা দক্ষিণের অধীনের এক প্রতিবেদনে সিঙ্গার বাংলাদেশ ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ১৪ কোটি ২৬ লাখ ২৮ হাজার টাকার ফাঁকি বেরিয়ে আসে। অপরদিকে ভ্যাট আইন অমান্য করে ২ লাখ ২১ হাজার ১০৮ টাকার অবৈধ রেয়াত নিয়েছে বলে অভিযোগ সিঙ্গার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।

পরে আরেক নিরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে উৎসে মূসক ও অবৈধ রেয়াত নেওয়ার প্রমাণ মিলে। একই সাথে আরও ২০ কোটি ৩১ লাখ ৫২ হাজার টাকার ভ্যাট না দেওয়ার চিত্র বেরিয়ে আসে। সবশেষ ভ্যাট গোয়েন্দার সমন্বিত নিরীক্ষায় ৩৪ কোটি ৬০ লাখ ১ হাজার ৮০৩ টাকার ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাট।

ট্যাগ :

শেয়ার দিয়ে সাথেই থাকুন

সিঙ্গারের বিরুদ্ধে ৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ

পোষ্ট হয়েছে : ০৭:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুলাই ২০২৩

প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: পূঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের বহুজাতিক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ফের ৩৪ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ উঠেছে, কোম্পানিটির বিদেশি চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা মিলে গত কয়েক বছরে পণ্যের বৈচিত্র্য এনে ভোক্তাদের নজর কেড়েছেন। করোনা-পূর্ববর্তী ২০১৯ সালে সিঙ্গার বাংলাদেশ রেকর্ড মুনাফা অর্জন করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সরকারকে প্রাপ্ত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছে। দুই বিদেশি শীর্ষ নির্বাহীর পুকুর চুরি দেশি প্রতিষ্ঠানকেও হার মানিয়েছে।

পাশাপাশি শেয়াবাজারের বিনিয়োগকারীদের বছরের পর বছর ঠকিয়ে আসছে কোম্পানিটি। কোম্পানিটি ২০১৭ সালে ১০০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিলেও মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালে ডিভিডেন্ড নেমে এসেছে ১০ শতাংশে।

২০২১ সালেও কোম্পানিটি ৫ টাকা ২০ পয়সা মুনাফা করে ৬০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০২০ সালে ৭ টাকা ৪৫ পয়সা মুনাফা করে ৩০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল। ২০১৯ সালে ১০ টাকা ৩৫ পয়সা মুনাফা করে ৭৭ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।২০১৮ সালে ১১ টাকা ৩৬ পয়সা মুনাফা করে ৩০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল।

কিন্তু ২০২২ সালে কোম্পানিটি মাত্র ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। যার মাধ্যমে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়েছে। তাই কোম্পানিটির গত পাঁচ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই বাছাই করার দাবী জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে, বাংলাদেশে ব্যবসা করলেও বাংলাদেশের আইনকানুনকে পাত্তা না দিয়ে বছরের পর বছর বিক্রির তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন ভ্যাটের নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বড় অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকির সাতকাহন বেরিয়ে এসেছে বলে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে।

কোম্পানিটি বাংলাদেশে ব্যবসা করলেও ঠিকমতো সরকারের রাজস্ব পরিশোধ করছে না। প্রতিষ্ঠানটি গত পাঁচ বছরে ৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন ভ্যাটের নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বড় অঙ্কের এই ফাঁকির চিত্র উঠে এসেছে।

এছাড়া শুধু রাজস্ব ফাঁকি নয়, অবৈধভাবে রেয়াতি সুবিধাও নিয়েছে সিঙ্গার বাংলাদেশ। একই সাথে অবৈধভাবে রেয়াতি সুবিধায় নেওয়ার প্রমান পেয়েছে, এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে ভ্যাটের নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে।

এনবিআর জানিয়েছে, গত ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে ৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয় সিঙ্গার বাংলাদেশ। কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা দক্ষিণের অধীনের এক প্রতিবেদনে সিঙ্গার বাংলাদেশ ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ১৪ কোটি ২৬ লাখ ২৮ হাজার টাকার ফাঁকি বেরিয়ে আসে। অপরদিকে ভ্যাট আইন অমান্য করে ২ লাখ ২১ হাজার ১০৮ টাকার অবৈধ রেয়াত নিয়েছে বলে অভিযোগ সিঙ্গার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।

পরে আরেক নিরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে উৎসে মূসক ও অবৈধ রেয়াত নেওয়ার প্রমাণ মিলে। একই সাথে আরও ২০ কোটি ৩১ লাখ ৫২ হাজার টাকার ভ্যাট না দেওয়ার চিত্র বেরিয়ে আসে। সবশেষ ভ্যাট গোয়েন্দার সমন্বিত নিরীক্ষায় ৩৪ কোটি ৬০ লাখ ১ হাজার ৮০৩ টাকার ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাট।