ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মশার কামড়ে ৩০ হাজার টাকা শেষ

  • পোষ্ট হয়েছে : ১১:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০২৩
  • / ৫০ বার দেখা হয়েছে

প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: ‘হাসপাতালে না আইসা মহল্লায় গিয়ে মশা মারার ব্যবস্থা করেন। এই মশাই যে কামড় দিলো আর এখন ৩০ হাজার টাকা শেষ। এই টাকা আমগো মতো গরীবরা কই থেকে দিবো। আমার ভাইজিটারে নিয়া ৭ দিন ধইরা ভোগতাছি।

 

আমরা গরীব মানুষ এই যে একটা হয়রানির মধ্যে পড়ছি।’ রাজধানীর মগবাজারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আড়াই বছর বয়সী মাহিয়া খান জান্নাত।

 

শিশুটির ফুফু শিউলী বেগম এমন অভিযোগের সুরে বলছিলেন কথাগুলো। গত রোববার (৯ জুলাই) শিশু মাহিয়া জ্বরে আক্রান্ত হয়। কখনও জ্বর ছাড়ে আবার কখনও আসে। এরপর মঙ্গলবার রাতে তীব্র জ্বর উঠে তার গায়ে।

 

টেস্ট করে দেখা হয় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত সে। পরদিন হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিশুটিকে। শিশুটির মা খাদিজা খাতুন বলেন, ধোলাইপাড় এলাকায় স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে থাকেন।

 

তার স্বামী ছোট একটা মুদির দোকান চালান। মেয়েকে নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দৌড়াদৌড়ি করছেন। মেয়ের বাবাকে দোকান ফেলে হাসপাতালে আসতে হচ্ছে। এভাবে যাতায়াতেও অনেক টাকা খরচ হচ্ছে তাদের।

 

এ বছর রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

 

এর মধ্যে চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনেই ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ১৯ হাজার ৪৫৪ জন। এর মধ্যে ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩ হাজার ২৩৮ জন। রোববার (১৬ জুলাই) দুপুরে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, রোগী ও তাদের স্বজনদের ভিড় করছে।

 

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনেই রোগীর স্বজনদের কেউ বসে আছেন, কেউ আবার রোগী দেখতে এসেছেন। ভেতরে প্রবেশ করেই ডেঙ্গু আক্রান্ত একটি শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডটিতে আটটি বেডেই রোগী। কোনো বেডই ফাঁকা নেই।

 

কেউ শিশুর হাত ধরে বসে আছেন, কেউ আবার শিশুকে কোলে নিয়ে বসে আছেন। কেউ বা ঘুমিয়ে থাকা শিশুর পাশে শুয়ে আছেন। প্রতিটি বেডে মশারি টানানোর ব্যবস্থা থাকলেও কোনো বেডেই মশারি টানানো নেই।

 

অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই স্বজনরা শিশুদের পাশে বসে আছেন। ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে ছেলে তাসফিন আহমেদ সাদিককে নিয়ে আসা আশা আক্তার বলেন, বুধবার ছেলেকে ভর্তি করিয়েছি। এখন অনেকটাই সুস্থ, তাকে ছুটি দিয়ে দেবে।

 

তাই আর মশারি টানায়নি। ডেঙ্গু আক্রান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, এক সপ্তাহ ধরেই ছেলের জ্বর। একবার জ্বর আসে আবার ছাড়ে। বুধবার হলি ফ্যামিলিতে ভর্তি করাই ছেলেকে। মশার কারণে বাচ্চাদের নিয়ে ভয়েই আছি।

 

প্রতিবছরই মশা বাড়ে, অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। এখন দেখতেছি ‘মশার সিজন আসার আগে ১ লাখ টাকা জমা রাখতে হবে।’ ওয়ার্ডটিতে শুক্রবার ভর্তি করা হয় ১০ বছরের শিশু সিনথিয়া জাহানকে।

 

দুটি হাসপাতাল ঘুরে তাকে এই হাসপাতালে যখন ভর্তি করা হয় তখন তার গায়ে জ্বর ১০১ থেকে ১০৩ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠছে। উদ্বেগ নিয়েই হাসপাতালে মেয়েকে নিয়ে আসেন বলে জানান শিশুটির মা শিখা খাতুন।

 

তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরেই মেয়ের জ্বর, নিউমোনিয়া। এর মধ্যে জ্বর খুব বেশি। তাই গত বৃহস্পতিবার মগবাজারের ওয়্যারলেসে ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজে ডেঙ্গু টেস্ট করাই।

 

টেস্টে ডেঙ্গু পজেটিভ আসে। শুক্রবার সকালে প্রথমে ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে সেখানে সিট নেই। এরপর আদদ্বীন জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই সেখানেও ভর্তি করাতে পারিনি।

 

পরে হলি ফ্যামিলিতে নিয়ে আসলাম। তিনদিনে এখন মেয়েটা একটু ভালো। হাসপাতালটির জরুরি সার্ভিস বিভাগের সহকারী নজরুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই হলি ফ্যামিলিতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি বাড়ে।

 

এ বছরের ১৬ জুলাই পর্যন্ত ৪১২ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। তবে কোনো রোগীই মারা যায়নি। ১৬ জুলাই পর্যন্ত ভর্তি রয়েছে ১৫১ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালটিতে শিশু ভর্তি রয়েছে ৪৯ জন আর প্রাপ্ত বয়স্ক ১০২ জন।

 

বাকি সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। সর্বশেষ রোববারও ভর্তি হয়েছে ৪২ জন ডেঙ্গু জ্বর আক্রান্ত রোগী। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, ডেঙ্গু হয়েছে জানার পর একজন রোগীকে পাঁচ থেকে ছয়দিন চিকিৎসা নিতে হয়।

 

কোনো কোনো রোগীকে এর চেয়ে কম ও আবার পরিস্থিতি বুঝে আরও বেশি দিন পর্যন্ত চিকিৎসা নিতে হয়। গত রোববার (৯ জুলাই) রাজধানীর ভিকারুন নেছা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহছানাকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় ভর্তি করা হয় হাসপাতালটিতে।

 

রোববার (১৬ জুলাই) তাকে রিলিজ দেওয়ার সময় গত ৮দিনে শিশুটির চিকিৎসার জন্য ৫৬ হাজার টাকা খরচ হয় পরিবারের। শিশুটির ফুফা নুরুজ্জামান জানান, ৪ হাজার টাকা কেবিন ভাড়া নিয়েছে।

 

সব মিলিয়ে গত ৮ দিনে ৫৬ হাজার টাকা খরচ। খরচ কম হয়নি। তারপরও মেয়ে অনেকটা সুস্থ্ হয়েছে এটাই স্বস্থি। শিশুটির মা লাবনী আক্তার বলেন, মেয়ে বেশ অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। বেশ উৎকণ্ঠায় ছিলাম।

 

হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর চিকিৎসা চলতে থাকে। এখন অনেকটাই সুস্থ্ হয়েছে। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে টানানো তালিকায় দেখা যায়, সাধারণ বেডের একদিনের ভাড়া (ননএসি) ৯০০ টাকা ও এসি হলে ১ হাজার ২০০ টাকা।

 

এ ছাড়া কেবিন ভাড়া একদিনে সর্বনিম্ন চার হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে।ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের উপ-পরিচালক (মেডিকেল) ডা. এ এস এম জাকির হোসেন প্রথমবার্তাকে বলেন, আমাদের এখানে যারা ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করেন তারা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য প্রতিবছরের ন্যায় এবারও যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। হাসপাতালটিতে বেশি খরচ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

 

এদিকে, রোববার (১৬ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে ডেঙ্গু চিকিৎসায় রোগীদের মাত্রাতিরিক্ত খরচের বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। ঢাকাসহ সারাদেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধিসহ মৃত্যু ও হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে।

 

কোনো কোনো বেসরকারি হাসপাতাল ডেঙ্গুরোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠছে। এ বিষয়ে ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসায় অতিরিক্ত খরচ নেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকদের বলছি, এ বিষয়ে দ্রুত খোঁজ নিতে হবে।

 

বেসরকারি যেসব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী আছে, সেগুলোতে টিম পাঠাতে হবে। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগীদের যেন বেশি ব্যয় না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

 

ডেঙ্গু পরীক্ষার রিপোর্ট দিতে দেরি করলে হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় নির্ধারণে মনিটরিং টিম করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুর নমুনা পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত ফি নেবে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। তবে বেড ভাড়া এবং অন্যান্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে চার্জ নির্ধারণ করা হয়নি।

ট্যাগ :

শেয়ার দিয়ে সাথেই থাকুন

মশার কামড়ে ৩০ হাজার টাকা শেষ

পোষ্ট হয়েছে : ১১:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০২৩

প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: ‘হাসপাতালে না আইসা মহল্লায় গিয়ে মশা মারার ব্যবস্থা করেন। এই মশাই যে কামড় দিলো আর এখন ৩০ হাজার টাকা শেষ। এই টাকা আমগো মতো গরীবরা কই থেকে দিবো। আমার ভাইজিটারে নিয়া ৭ দিন ধইরা ভোগতাছি।

 

আমরা গরীব মানুষ এই যে একটা হয়রানির মধ্যে পড়ছি।’ রাজধানীর মগবাজারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আড়াই বছর বয়সী মাহিয়া খান জান্নাত।

 

শিশুটির ফুফু শিউলী বেগম এমন অভিযোগের সুরে বলছিলেন কথাগুলো। গত রোববার (৯ জুলাই) শিশু মাহিয়া জ্বরে আক্রান্ত হয়। কখনও জ্বর ছাড়ে আবার কখনও আসে। এরপর মঙ্গলবার রাতে তীব্র জ্বর উঠে তার গায়ে।

 

টেস্ট করে দেখা হয় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত সে। পরদিন হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিশুটিকে। শিশুটির মা খাদিজা খাতুন বলেন, ধোলাইপাড় এলাকায় স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে থাকেন।

 

তার স্বামী ছোট একটা মুদির দোকান চালান। মেয়েকে নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দৌড়াদৌড়ি করছেন। মেয়ের বাবাকে দোকান ফেলে হাসপাতালে আসতে হচ্ছে। এভাবে যাতায়াতেও অনেক টাকা খরচ হচ্ছে তাদের।

 

এ বছর রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

 

এর মধ্যে চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনেই ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ১৯ হাজার ৪৫৪ জন। এর মধ্যে ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩ হাজার ২৩৮ জন। রোববার (১৬ জুলাই) দুপুরে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, রোগী ও তাদের স্বজনদের ভিড় করছে।

 

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনেই রোগীর স্বজনদের কেউ বসে আছেন, কেউ আবার রোগী দেখতে এসেছেন। ভেতরে প্রবেশ করেই ডেঙ্গু আক্রান্ত একটি শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডটিতে আটটি বেডেই রোগী। কোনো বেডই ফাঁকা নেই।

 

কেউ শিশুর হাত ধরে বসে আছেন, কেউ আবার শিশুকে কোলে নিয়ে বসে আছেন। কেউ বা ঘুমিয়ে থাকা শিশুর পাশে শুয়ে আছেন। প্রতিটি বেডে মশারি টানানোর ব্যবস্থা থাকলেও কোনো বেডেই মশারি টানানো নেই।

 

অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই স্বজনরা শিশুদের পাশে বসে আছেন। ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে ছেলে তাসফিন আহমেদ সাদিককে নিয়ে আসা আশা আক্তার বলেন, বুধবার ছেলেকে ভর্তি করিয়েছি। এখন অনেকটাই সুস্থ, তাকে ছুটি দিয়ে দেবে।

 

তাই আর মশারি টানায়নি। ডেঙ্গু আক্রান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, এক সপ্তাহ ধরেই ছেলের জ্বর। একবার জ্বর আসে আবার ছাড়ে। বুধবার হলি ফ্যামিলিতে ভর্তি করাই ছেলেকে। মশার কারণে বাচ্চাদের নিয়ে ভয়েই আছি।

 

প্রতিবছরই মশা বাড়ে, অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। এখন দেখতেছি ‘মশার সিজন আসার আগে ১ লাখ টাকা জমা রাখতে হবে।’ ওয়ার্ডটিতে শুক্রবার ভর্তি করা হয় ১০ বছরের শিশু সিনথিয়া জাহানকে।

 

দুটি হাসপাতাল ঘুরে তাকে এই হাসপাতালে যখন ভর্তি করা হয় তখন তার গায়ে জ্বর ১০১ থেকে ১০৩ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠছে। উদ্বেগ নিয়েই হাসপাতালে মেয়েকে নিয়ে আসেন বলে জানান শিশুটির মা শিখা খাতুন।

 

তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরেই মেয়ের জ্বর, নিউমোনিয়া। এর মধ্যে জ্বর খুব বেশি। তাই গত বৃহস্পতিবার মগবাজারের ওয়্যারলেসে ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজে ডেঙ্গু টেস্ট করাই।

 

টেস্টে ডেঙ্গু পজেটিভ আসে। শুক্রবার সকালে প্রথমে ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে সেখানে সিট নেই। এরপর আদদ্বীন জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই সেখানেও ভর্তি করাতে পারিনি।

 

পরে হলি ফ্যামিলিতে নিয়ে আসলাম। তিনদিনে এখন মেয়েটা একটু ভালো। হাসপাতালটির জরুরি সার্ভিস বিভাগের সহকারী নজরুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই হলি ফ্যামিলিতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি বাড়ে।

 

এ বছরের ১৬ জুলাই পর্যন্ত ৪১২ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। তবে কোনো রোগীই মারা যায়নি। ১৬ জুলাই পর্যন্ত ভর্তি রয়েছে ১৫১ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালটিতে শিশু ভর্তি রয়েছে ৪৯ জন আর প্রাপ্ত বয়স্ক ১০২ জন।

 

বাকি সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। সর্বশেষ রোববারও ভর্তি হয়েছে ৪২ জন ডেঙ্গু জ্বর আক্রান্ত রোগী। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, ডেঙ্গু হয়েছে জানার পর একজন রোগীকে পাঁচ থেকে ছয়দিন চিকিৎসা নিতে হয়।

 

কোনো কোনো রোগীকে এর চেয়ে কম ও আবার পরিস্থিতি বুঝে আরও বেশি দিন পর্যন্ত চিকিৎসা নিতে হয়। গত রোববার (৯ জুলাই) রাজধানীর ভিকারুন নেছা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহছানাকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় ভর্তি করা হয় হাসপাতালটিতে।

 

রোববার (১৬ জুলাই) তাকে রিলিজ দেওয়ার সময় গত ৮দিনে শিশুটির চিকিৎসার জন্য ৫৬ হাজার টাকা খরচ হয় পরিবারের। শিশুটির ফুফা নুরুজ্জামান জানান, ৪ হাজার টাকা কেবিন ভাড়া নিয়েছে।

 

সব মিলিয়ে গত ৮ দিনে ৫৬ হাজার টাকা খরচ। খরচ কম হয়নি। তারপরও মেয়ে অনেকটা সুস্থ্ হয়েছে এটাই স্বস্থি। শিশুটির মা লাবনী আক্তার বলেন, মেয়ে বেশ অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। বেশ উৎকণ্ঠায় ছিলাম।

 

হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর চিকিৎসা চলতে থাকে। এখন অনেকটাই সুস্থ্ হয়েছে। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে টানানো তালিকায় দেখা যায়, সাধারণ বেডের একদিনের ভাড়া (ননএসি) ৯০০ টাকা ও এসি হলে ১ হাজার ২০০ টাকা।

 

এ ছাড়া কেবিন ভাড়া একদিনে সর্বনিম্ন চার হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে।ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের উপ-পরিচালক (মেডিকেল) ডা. এ এস এম জাকির হোসেন প্রথমবার্তাকে বলেন, আমাদের এখানে যারা ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করেন তারা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য প্রতিবছরের ন্যায় এবারও যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। হাসপাতালটিতে বেশি খরচ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

 

এদিকে, রোববার (১৬ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে ডেঙ্গু চিকিৎসায় রোগীদের মাত্রাতিরিক্ত খরচের বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। ঢাকাসহ সারাদেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধিসহ মৃত্যু ও হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে।

 

কোনো কোনো বেসরকারি হাসপাতাল ডেঙ্গুরোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠছে। এ বিষয়ে ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসায় অতিরিক্ত খরচ নেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকদের বলছি, এ বিষয়ে দ্রুত খোঁজ নিতে হবে।

 

বেসরকারি যেসব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী আছে, সেগুলোতে টিম পাঠাতে হবে। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগীদের যেন বেশি ব্যয় না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

 

ডেঙ্গু পরীক্ষার রিপোর্ট দিতে দেরি করলে হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় নির্ধারণে মনিটরিং টিম করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুর নমুনা পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত ফি নেবে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। তবে বেড ভাড়া এবং অন্যান্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে চার্জ নির্ধারণ করা হয়নি।