ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপির ২১১ নেতা বগুড়ায় ৪ মামলায় আসামি

  • পোষ্ট হয়েছে : ০৭:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩
  • / ৫৪ বার দেখা হয়েছে

প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: বগুড়ায় বিএনপির পদযাত্রা থেকে পুলিশের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশ স্থাপনায় হামলার ও বাস ভাংচুরের ঘটনায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ২১১ নেতার নাম উল্লেখ করে পৃথক চারটি মামলা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে সদর থানায় তিনটি ও বাস চালক দুপচাঁচিয়া থানায় একটি মামলা করেন। এজাহারে অজ্ঞাত অনেককে রাখা হয়েছে।

 

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে শহরের ইয়াকুবিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এলাকা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিশ্রুতি অমান্য করে পদযাত্রা নিয়ে শহরের সাতমাথায় যেতে চায়।

 

পুলিশ বাধা দিলে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর এবং অন্তত ১৫টি বড় হাতবোমা (ককটেল) বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।

 

তারা নারুলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তরিকুল ইসলামকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারপিট করে। তাদের হামলায় পুলিশের তিন নারী সদস্যসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।

 

ডিবি পুলিশের এসআই আশিকুর রহমানসহ আহতদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জানমাল রক্ষায় ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ১০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে।

 

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের এ হামলা ছিল পরিকল্পিত। হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লাঠি ও সঙ্গে ককটেল এবং ইটপাটকেল বহন করে। এসব দিয়ে তারা বিনা উস্কানিতে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করেন।

 

তারা বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের বাসে হামলা চালায়। জানালার কাঁচ ভেঙে মাথায় লেগে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী জুমিয়া জুবায়ের (৮) গুরুতর আহত হয়। শিশুটির মাথায় ১০টি সেলাই দিতে হয়েছে।

 

এছাড়া শহরের ইয়াকুবিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলা মোকাবেলা করতে গিয়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। এ টিয়ারশেলের ঝাঁজে অর্ধশত ছাত্রী অসুস্থ হয়। এদের মধ্যে ২৭ জন বগুড়া মোহম্মদ আলী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।

 

এ তিনটি মামলার অন্যতম আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা, সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন, এমআর ইসলাম স্বাধীন, হামিদুল হক চৌধুরী হিরু, কেএম খায়রুল বাশার, সহিদ উন নবী সালাম, এবিএম মাজেদুর রহমান, খাদেমুল ইসলাম খাদেম, অ্যাডভোকেট একেএম সাইফুল ইসলাম, সাবেক এমপি মোশারফ হোসেন, লাভলী রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, আবু হাসান, নূরে আলম সিদ্দিকী রিগ্যান, আদিল শাহরিয়ার গোর্কি প্রমুখ।

 

বগুড়া সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শাহীনুজ্জামান জানান, পুলিশ ও তাদের স্থাপনায় হামলা এবং ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১৮৯ জনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে।

 

পুলিশ বাদী হয়ে এসব মামলা করে। এর মধ্যে শহরের ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ে বিস্ফোরক দ্রব্যসহ বিভিন্ন আইনে ৪৯ জন, সদর পুলিশ ফাঁড়ির ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২৬ জন ও ডায়াবেটিস হাসপাতাল এলাকার ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনসহ বিভিন্ন ধারায় ১১৪ জনকে আসামি করা হয়।

 

মামলার বাদীরা হলেন- বনানী পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আমিনুল ইসলাম, সদর ফাঁড়ির এসআই শহীদুল ইসলাম ও সদর থানার এসআই আবদুল মালেক।

 

মঙ্গলবার রাতে মামলার পর বগুড়া শহরের সূত্রাপুর রিয়াজ কাজী লেনের বাসা থেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা ও পুরান বগুড়ার বাসা থেকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহবায়ক এবিএম মাজেদুর রহমান জুয়েলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার বিকালে তাদের আদালতে হাজির করে পাঁচদিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়।

 

দুপচাঁচিয়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে নওগাঁ ছেড়ে আসা ঢাকাগামী শাহ ফতেহ আলী পরিবহণের বাস সাহারপুকুর বাজার এলাকায় পৌঁছে। তখন বিএনপির পদযাত্রা থেকে হামলা চালিয়ে বাসের কাঁচ ভাঙচুর করা হয়।

 

এ সময় অন্যান্য যানবাহনেও ভাংচুর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ওই বাসের চালক মো. ফেরদাউস মঙ্গলবার রাতে থানায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মহিত তালুকদারসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন।

 

বুধবার ভোরে পুলিশ এজাহার নামীয় আসামি আদমদীঘি উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের আবু বক্কর, মো. তামিম ও মো. রাজুকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

 

তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা অভিযোগ করেন, পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় হামলা, গুলি ও লাঠিচার্জ করে।

 

এতে অর্ধশত গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশের টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অর্ধশত ছাত্রী অসুস্থ হয়। তবে তিনি পুলিশের ওপর ককটেল ও ইটপাটকেল হামলার কথা অস্বীকার করেন।

ট্যাগ :

শেয়ার দিয়ে সাথেই থাকুন

বিএনপির ২১১ নেতা বগুড়ায় ৪ মামলায় আসামি

পোষ্ট হয়েছে : ০৭:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩

প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: বগুড়ায় বিএনপির পদযাত্রা থেকে পুলিশের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশ স্থাপনায় হামলার ও বাস ভাংচুরের ঘটনায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ২১১ নেতার নাম উল্লেখ করে পৃথক চারটি মামলা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে সদর থানায় তিনটি ও বাস চালক দুপচাঁচিয়া থানায় একটি মামলা করেন। এজাহারে অজ্ঞাত অনেককে রাখা হয়েছে।

 

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে শহরের ইয়াকুবিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এলাকা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিশ্রুতি অমান্য করে পদযাত্রা নিয়ে শহরের সাতমাথায় যেতে চায়।

 

পুলিশ বাধা দিলে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর এবং অন্তত ১৫টি বড় হাতবোমা (ককটেল) বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।

 

তারা নারুলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তরিকুল ইসলামকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারপিট করে। তাদের হামলায় পুলিশের তিন নারী সদস্যসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।

 

ডিবি পুলিশের এসআই আশিকুর রহমানসহ আহতদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জানমাল রক্ষায় ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ১০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে।

 

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের এ হামলা ছিল পরিকল্পিত। হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লাঠি ও সঙ্গে ককটেল এবং ইটপাটকেল বহন করে। এসব দিয়ে তারা বিনা উস্কানিতে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করেন।

 

তারা বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের বাসে হামলা চালায়। জানালার কাঁচ ভেঙে মাথায় লেগে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী জুমিয়া জুবায়ের (৮) গুরুতর আহত হয়। শিশুটির মাথায় ১০টি সেলাই দিতে হয়েছে।

 

এছাড়া শহরের ইয়াকুবিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলা মোকাবেলা করতে গিয়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। এ টিয়ারশেলের ঝাঁজে অর্ধশত ছাত্রী অসুস্থ হয়। এদের মধ্যে ২৭ জন বগুড়া মোহম্মদ আলী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।

 

এ তিনটি মামলার অন্যতম আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা, সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন, এমআর ইসলাম স্বাধীন, হামিদুল হক চৌধুরী হিরু, কেএম খায়রুল বাশার, সহিদ উন নবী সালাম, এবিএম মাজেদুর রহমান, খাদেমুল ইসলাম খাদেম, অ্যাডভোকেট একেএম সাইফুল ইসলাম, সাবেক এমপি মোশারফ হোসেন, লাভলী রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, আবু হাসান, নূরে আলম সিদ্দিকী রিগ্যান, আদিল শাহরিয়ার গোর্কি প্রমুখ।

 

বগুড়া সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শাহীনুজ্জামান জানান, পুলিশ ও তাদের স্থাপনায় হামলা এবং ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১৮৯ জনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে।

 

পুলিশ বাদী হয়ে এসব মামলা করে। এর মধ্যে শহরের ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ে বিস্ফোরক দ্রব্যসহ বিভিন্ন আইনে ৪৯ জন, সদর পুলিশ ফাঁড়ির ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২৬ জন ও ডায়াবেটিস হাসপাতাল এলাকার ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনসহ বিভিন্ন ধারায় ১১৪ জনকে আসামি করা হয়।

 

মামলার বাদীরা হলেন- বনানী পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আমিনুল ইসলাম, সদর ফাঁড়ির এসআই শহীদুল ইসলাম ও সদর থানার এসআই আবদুল মালেক।

 

মঙ্গলবার রাতে মামলার পর বগুড়া শহরের সূত্রাপুর রিয়াজ কাজী লেনের বাসা থেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা ও পুরান বগুড়ার বাসা থেকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহবায়ক এবিএম মাজেদুর রহমান জুয়েলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার বিকালে তাদের আদালতে হাজির করে পাঁচদিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়।

 

দুপচাঁচিয়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে নওগাঁ ছেড়ে আসা ঢাকাগামী শাহ ফতেহ আলী পরিবহণের বাস সাহারপুকুর বাজার এলাকায় পৌঁছে। তখন বিএনপির পদযাত্রা থেকে হামলা চালিয়ে বাসের কাঁচ ভাঙচুর করা হয়।

 

এ সময় অন্যান্য যানবাহনেও ভাংচুর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ওই বাসের চালক মো. ফেরদাউস মঙ্গলবার রাতে থানায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মহিত তালুকদারসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন।

 

বুধবার ভোরে পুলিশ এজাহার নামীয় আসামি আদমদীঘি উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের আবু বক্কর, মো. তামিম ও মো. রাজুকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

 

তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা অভিযোগ করেন, পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় হামলা, গুলি ও লাঠিচার্জ করে।

 

এতে অর্ধশত গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশের টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অর্ধশত ছাত্রী অসুস্থ হয়। তবে তিনি পুলিশের ওপর ককটেল ও ইটপাটকেল হামলার কথা অস্বীকার করেন।