বিএনপি-আ.লীগের পাল্টাপাল্টি হামলা চট্টগ্রামে
- পোষ্ট হয়েছে : ০৯:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩
- / ৫৭ বার দেখা হয়েছে
প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে পাল্টাপাল্টি হামলা হয়েছে। বুধবার বিকেলে বিএনপির পদযাত্রা শেষে নগরীর খুলশী থানার ওয়াসা মোড়ে জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের বিপরীতে চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালান বিএনপি নেতাকর্মীরা।
এ সময় তারা প্রচারণার গাড়ি ও রাস্তায় যানবাহনেও ভাঙচুর চালান। ভাঙচুর শেষে চলে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের বহন করা একটি বাস আটকে কয়েকজনকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
এর কিছু সময় পর সংঘবদ্ধ হয়ে কাজীর দেউরী সংলগ্ন নাসিমন ভবন বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালান যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় থেকে আনুমানিক ১০০ গজের মধ্যেই রয়েছে দামপাড়া পুলিশ লাইনে নগর পুলিশের সদরদপ্তর। আর এখান থেকে বিএনপি কার্যালয়ের দূরত্ব আনুমানিক এক কিলোমিটার।
মহিউদ্দিন বাচ্চুর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রচার সেলের সমন্বয়ক ও নগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক বলেন, ‘বিএনপির সন্ত্রাসীরা যখন আমাদের নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় তখন আমরা উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে প্রার্থীকে নিয়ে প্রচারণায় ছিলাম। সেখানে খবর পাই, বিএনপির পদযাত্রা শেষে আমাদের যে মূল নির্বাচনী কার্যালয় রয়েছে তাতে তারা হামলা করেছে।
কার্যালয়ে সে সময় নেতাদের মধ্যে তেমন কেউ ছিলেন না, কয়েকজন কর্মী ছিলেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবেই এই হামলা করেছেন।’ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগের কয়েকজন কর্মী অভিযোগ করে বলেন, পদযাত্রা শেষে লালখান বাজার থেকে ওয়াসা মোড়ের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন বিএনপির কিছু নেতকর্মী।
নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে গিয়েই হঠাৎ করে তারা ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকেন। কয়েকজন ভেতরে গিয়ে প্রচারণার কয়েকটি ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন ও চেয়ারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। এছাড়া কার্যালয়ের সামনে রাখা নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করেন।
এরপর তারা সড়কেও কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলের দিকে আসতে থাকলে তারা পালিয়ে যান।
ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক হাবিবুর রহমান তারেক প্রথমবার্তাকে বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিএনপির নেতাকর্মীদের গাড়ি রাখা ছিল ওয়াসার মোড়ে।
দেওয়ানহাট থেকে পদযাত্রা শেষ করে কিছু নেতাকর্মী সেসব বাসে ওঠার জন্য যাচ্ছিলেন। পথে তারা অতর্কিত আমাদের নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এ সময় তারা আমাদের প্রচারণার একটি পাজেরো, একটি প্রাইভেটকার ও ১০ থেকে ১৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে। আবার সড়কেও তারা গাড়ি ভাঙচুর করেন।
সবমিলিয়ে ২০ থেকে ২৫টিরও বেশি গাড়ি ভাঙচুর করেন তারা। বিষয়টি জানার পর জিইসি মোড় থেকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা একত্র হয়ে নির্বাচনী কার্যালয়ের দিকে গেলে বিএনপির নেতাকর্মীরা পালিয়ে যান।
বাসে উঠে পালানোর চেষ্টার সময় সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে একটি বাস আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হামলাকারীরা নিজেদের উত্তর জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছে।’
এদিকে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা নাসিমন ভবন বিএনপি কার্যালয়ে গিয়ে পাল্টা হামলা চালান। তারা এ সময় কিছু ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার পাশাপাশি চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন।
পরে নাসিমন ভবনের সামনে সড়কে ব্যানার জড়ো করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। অবশ্য তখন সেখানে বিএনপির তেমন কোনো নেতাকর্মী ছিলেন না। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের নিবৃত্ত করেন।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন প্রথমবার্তাকে বলেন, ‘লালখান বাজার কিংবা ওয়াসা মোড়ে আমাদের কোনো কার্যক্রম ছিল না। নাসিমন ভবন থেকে পদযাত্রা শুরু করে দেওয়ানহাটে গিয়ে শেষ হয়ে যায়।
তাছাড়া আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না। তাই প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের প্রশ্নই আসে না। আওয়ামী লীগের লোকজন হয়তো এই ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে। আবার উল্টো ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের কার্যালয়েও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন।’
নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিএনপির পদযাত্রা ছিল দুপুর ২টা থেকে। সেটা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। তাদের যে কর্মীরা ছিল তারা যাওয়ার সময় ওয়াসা মোড়ে নির্বাচনী কার্যালয়ে ফ্লাইওভারের উপর থেকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেছে বলে জানতে পেরেছি।
এর ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তাৎক্ষণিক পুলিশ গিয়ে উভয় পক্ষকে নিবৃত করে সরিয়ে দিয়েছে। পরবর্তীতে কিছু লোকজন নাসিমন ভবনের দিকে এসেছিল। আমরা তাদের নিবৃত করেছি। তারা চলে গেছে। এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কেউ আটক নেই।’
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় যোগাযোগ করা হলে নগরীর খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ চাকমা প্রথমবার্তাকে বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গেপ্তার করা হয়নি এবং কোনো পক্ষ থেকে মামলাও করা হয়নি।’