1. [email protected] : bijoy : bijoy Book
  2. [email protected] : News Room : News Room
  3. [email protected] : news uploader : news uploader
  4. [email protected] : prothombarta :
২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা পরিচালকদের ঋণ
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০২:১৪ রাত

২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা পরিচালকদের ঋণ

  • পোষ্ট হয়েছে : সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০২৩

প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক:  ব্যাংক খাতে ১৪ লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক পরিচালকরা নিয়েছেন প্রায় ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

 

এর বেশির ভাগই যোগসাজশের ঋণ। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে প্রায় ৭৫৭ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ। যদিও ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, এক টাকাও খেলাপি থাকলে ব্যাংকের পরিচালক হওয়া বা থাকার সুযোগ নেই।

 

কিন্তু বাস্তবে এক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ নেই। যে কারণে খেলাপি হয়েও অনেকে পরিচালক পদে বহাল আছেন। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

 

সংশ্লিষ্টরা বলেন, নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ব্যাংক পরিচালকরা যোগসাজশের মাধ্যমে ঋণ নিচ্ছেন। মানে-‘আমার ব্যাংক থেকে তুমি নাও, তোমার ব্যাংক থেকে আমি নেব’, এ পদ্ধতিতে ঋণ নিয়েছেন পরিচালকরা। এরপর পরিশোধের ক্ষেত্রে তারা ছলচাতুরির আশ্রয় নেন। এতে তাদের কাছে পাহাড় পরিমাণ অর্থ পুঞ্জীভূত হয়েছে।

 

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রথমবার্তাকে বলেন, এখানে সুশাসন নেই। নেই কোনো আইনের প্রয়োগ।

 

পরিচালকরা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে তা আর ফেরত দিচ্ছেন না। এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংক থেকে যোগসাজশ করে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এসব বন্ধ না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে পরিচালকদের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে নিজস্ব ব্যাংক থেকে পরিচালকদের নেওয়া ঋণ ১৪০০ কোটি টাকা। অন্যান্য ব্যাংক থেকে তারা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা ঋণ।

 

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নতুন নিয়মে ব্যাংক পরিচালকরা নিজেদের ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন না।

 

এই বাধা পাশ কাটাতে তারা নামে-বেনামে যোগসাজশের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। ঋণের অর্থ কোথায় ব্যবহার হচ্ছে, এরও কোনো হদিস নেই।

 

এভাবে অনৈতিকভাবে ঋণ নেওয়া সুশাসনের জন্য বড় অন্তরায়, যা আমানতকারীদের ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর পদক্ষেপ না নিলে পরিচালকরা আগামী দিনে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবেন, যা ব্যাংক খাতের জন্য অশনিসংকেত হবে বলে তারা মনে করেন।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথমবার্তাকে বলেন, ব্যাংক খাতের দুরবস্থার জন্য কমবেশি সব পক্ষ দায়ী। তবে বেশি দায়ী ব্যাংকের পরিচালকরা।

 

তারা টাকাপয়সা নিলে ফেরত দিতে চান না। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ম্যানেজমেন্টের হাত-পা বেঁধে রাখেন। ব্যবস্থাপনার কাজে খবরদারি করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকও দৃষ্টান্তমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এ কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. মইনুল ইসলাম প্রথমবার্তাকে বলেন, ব্যাংকের পরিচালকরা রাজনীতিরও প্রধান পরিচালক হয়ে উঠেছেন।

 

এ কারণে তারা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী। রাজনীতিতে তাদের প্রভাব অনেক বেশি। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। দিনের পর দিন আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন। ব্যাংক খাতে এই ভয়াবহ চিত্রের জন্য রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারই দায়ী।

 

 

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন প্রথমবার্তাকে বলেন, ব্যাংক পরিচালকের ঋণ মেরিটে নয়, প্রভাবে দেওয়া হয়। এ ঋণ অনেক সময় পরিশোধ হয় না। পরিশোধ না করায় ঋণের উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে।

 

অর্থ তাদের হাতে কুক্ষিগত থাকায় অন্যরা ঋণ পাচ্ছেন না। এতে ব্যাংক দুর্বল হচ্ছে। এসব তথ্য যেহেতু প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এর মানে-কর্তৃপক্ষ সব জেনেশুনেও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এখান থেকে বের হতে হবে। তা না হলে সামনে ব্যাংক খাতের জন্য আরও খারাপ দিন অপেক্ষা করছে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, পরিচালকদের ঋণের বিষয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ধারায় সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে।

 

কেউ চাইলে ইচ্ছামতো ঋণ নিতে পারেন না। নিয়ম মেনেই ঋণ নিতে হয়। তবে কেউ যদি নিয়ম ভঙ্গ করে নিজস্ব ব্যাংক বা অন্যান্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় তবে আইন অনুযায়ী শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।

 

কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে কথা বললে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যাংক পরিচালক অন্য কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ওই খেলাপি পরিচালককে নোটিশ দেবে।

 

নোটিশ দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে ঋণ পরিশোধ না করলে খেলাপি ব্যক্তি তার ব্যাংকে পরিচালকের পদ হারাবেন। তবে পরিচালকদের ঋণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সম্পর্ক, যোগসাজশ ও প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী হয় না অধিকাংশ ব্যাংক।

 

আবার কোনো কোনো ব্যাংক আগ্রহ দেখালেও সংশ্লিষ্ট পরিচালক আদালতে যান। অপরদিকে বেশির ভাগই প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় জানার পরও ঘটছে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অসহায়ত্ব ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।

Facebook Comments Box

শেয়ার দিয়ে সাথেই থাকুন

print sharing button
এ বিভাগের অন্যান্য খবর