ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেজর জিয়াও তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতেন, জামাতুল আনসারের নেতা আনিসুরই: র‌্যাব

  • পোষ্ট হয়েছে : ০৭:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুলাই ২০২৩
  • / ৪৬ বার দেখা হয়েছে

প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: গ্রেফতার আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদই জামাতুল আনসারের আমির। নতুন জঙ্গি দল জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে লেখক-প্রকাশক হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জিয়াউল হকের ‘যোগাযোগ ছিল’ বলে র‌্যাব জানায়।

 

এ বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলছেন, নিষিদ্ধ জঙ্গি দল আনসার আল ইসলামের নেতা সেনাবাহিনীর বরখাস্ত মেজর জিয়া বেশ কয়েকবার বান্দরবানে গিয়ে জামাতুল আনসারের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদের সঙ্গে দেখাও করেছেন।

 

সোমবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র‌্যাবের কর্মকর্তা মঈন। রোববার রাত ৩টার দিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের একটি বাসা থেকে আনিসুরসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ৩২ বছর বয়সি আনিসুর রহমান মাহমুদের বাড়ি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার হরকল গ্রামে। তার বাবার নাম মোখলেছুর রহমান।

 

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার হওয়া আনিসুরের সঙ্গে আনসার আল ইসলামের নেতাদের সুসম্পর্ক ছিল। শীর্ষ জঙ্গি নেতা মেজর জিয়ার সঙ্গেও তার বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল।

 

বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায় এবং প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জিয়ার বিরুদ্ধে জঙ্গি হামলা ও হত্যার আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে। তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

 

২৩ জুন রাতে ঢাকার ডেমরা থেকে জঙ্গি দল জামাতুল আনসারের নেতা শামিন মাহফুজ ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করার কথা জানায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। পুলিশের এই বিশেষায়িত বাহিনী বলছে- শামিন মাহফুজই জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ‘প্রতিষ্ঠাতা’।

 

তবে র‌্যাব জানায়, শামিন মাহফুজ এই সংগঠনের উপদেষ্টা। আর মূল ব্যক্তি, অর্থাৎ আমির হলেন কুমিল্লার আনিসুর রহমান মাহমুদ।

 

২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনী এক সংবাদ সম্মেলনে সরকার উৎখাতে ধর্মান্ধ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার একটি অভ্যুত্থান পরিকল্পনা নস্যাৎ করার খবর দেয়। অভ্যুত্থান চেষ্টাকারীদের নেতা হিসেবে জানানো হয় মেজর জিয়ার নাম। তখন সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া জিয়া পালিয়ে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামে যুক্ত হন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

 

২০১৬ সালে গুলশান হামলার পর জিয়াকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে সরকার। তখন পুরস্কার ঘোষিত তামিম চৌধুরীসহ জঙ্গিদের কয়েকজন শীর্ষনেতা র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে নিহত হলেও জিয়ার খোঁজ মেলেনি।

 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, দণ্ডিত জিয়া অন্য কোনো দেশে পালিয়ে রয়েছেন বলে তথ্য রয়েছে তাদের কাছে। তবে র‌্যাব এখন অন্য তথ্য দিচ্ছে।

 

সোমবার র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২২ সালে কিশোরগঞ্জে আনসার আল ইসলাসের সঙ্গে একটি বৈঠকে জামাতুল আনসার নেতা আনিসুর রহমান মাহমুদের একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী আনিসুরকে ১৫ লাখ টাকা দেয় আনসার আল ইসলাম। পরে আরও টাকা দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।

 

চুক্তি অনুযায়ী জামাতুল আনসারের সদস্যদের আনসার আল ইসলাম আইটি ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেবে। বিনিময়ে আনসার আল ইসলামের সদস্যদের পার্বত্য অঞ্চলে অস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং অস্ত্র সরবরাহ করবে জামাতুল আনসার।

 

পরে আনিসুর কেএনএফ প্রধান নাথান বম ও সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংচুংয়ের সঙ্গে বৈঠক করে আনসার আল ইসলামের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে অবহিত করেন ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় করেন বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন।

 

লৌহজংয়ের বাড়ি তিন দিন আগে ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গিরা

রোববার রাত ৩টার দিকে লৌহজং উপজেলার বড় নওপাড়া গ্রামের একটি একতলা বাড়ি ঘিরে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় আনিসুর রহমান মাহমুদ (৩২) এবং তার দুই সহযোগী কাজী সিরাজ উদ্দীন ওরফে সিরাজ (৩৪) এবং মাহফুজুর রহমান বিজয় ওরফে বাবুল ওরফে জাম্বুলিকে (২৮)।

 

ওই বাড়ি থেকে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, উগ্রবাদী পুস্তিকা ও নগদ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান।

 

বাড়ির মালিক আনোয়ারা বেগমের স্বামী বদিউর রহমান মারা গেছেন, ছেলেরা আলাদা থাকায় বাড়িটি তিনিই দেখভাল করেন। আনোয়ারা বেগম জানান, তার একতলা ভবনের দুটি কক্ষ তিন দিন আগে ভাড়া নেন হাসান নামের একজন। এক পরিবারের সদস্য পরিচয় দিয়ে তিনজন পুরুষ বাসায় ওঠেন, পরিবারের নারী সদস্যরা পরে আসবেন বলে সে সময় তারা জানান।

 

ভাড়া ঠিক হয়েছিল এক হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিলসহ মোট ৫ হাজার টাকা। নতুন ভাড়াটেরা বলেছিল- জাতীয় পরিচয়পত্র দুই দিন পরে দেবে।

 

আনোয়ারা বলেন, রাত ৩টার দিকে হঠাৎ তার বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। পরে নতুন ভাড়াটেদের তিনজনকেই গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

ট্যাগ :

শেয়ার দিয়ে সাথেই থাকুন

মেজর জিয়াও তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতেন, জামাতুল আনসারের নেতা আনিসুরই: র‌্যাব

পোষ্ট হয়েছে : ০৭:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুলাই ২০২৩

প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: গ্রেফতার আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদই জামাতুল আনসারের আমির। নতুন জঙ্গি দল জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে লেখক-প্রকাশক হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জিয়াউল হকের ‘যোগাযোগ ছিল’ বলে র‌্যাব জানায়।

 

এ বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলছেন, নিষিদ্ধ জঙ্গি দল আনসার আল ইসলামের নেতা সেনাবাহিনীর বরখাস্ত মেজর জিয়া বেশ কয়েকবার বান্দরবানে গিয়ে জামাতুল আনসারের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদের সঙ্গে দেখাও করেছেন।

 

সোমবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র‌্যাবের কর্মকর্তা মঈন। রোববার রাত ৩টার দিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের একটি বাসা থেকে আনিসুরসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ৩২ বছর বয়সি আনিসুর রহমান মাহমুদের বাড়ি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার হরকল গ্রামে। তার বাবার নাম মোখলেছুর রহমান।

 

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার হওয়া আনিসুরের সঙ্গে আনসার আল ইসলামের নেতাদের সুসম্পর্ক ছিল। শীর্ষ জঙ্গি নেতা মেজর জিয়ার সঙ্গেও তার বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল।

 

বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায় এবং প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জিয়ার বিরুদ্ধে জঙ্গি হামলা ও হত্যার আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে। তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

 

২৩ জুন রাতে ঢাকার ডেমরা থেকে জঙ্গি দল জামাতুল আনসারের নেতা শামিন মাহফুজ ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করার কথা জানায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। পুলিশের এই বিশেষায়িত বাহিনী বলছে- শামিন মাহফুজই জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ‘প্রতিষ্ঠাতা’।

 

তবে র‌্যাব জানায়, শামিন মাহফুজ এই সংগঠনের উপদেষ্টা। আর মূল ব্যক্তি, অর্থাৎ আমির হলেন কুমিল্লার আনিসুর রহমান মাহমুদ।

 

২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনী এক সংবাদ সম্মেলনে সরকার উৎখাতে ধর্মান্ধ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার একটি অভ্যুত্থান পরিকল্পনা নস্যাৎ করার খবর দেয়। অভ্যুত্থান চেষ্টাকারীদের নেতা হিসেবে জানানো হয় মেজর জিয়ার নাম। তখন সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া জিয়া পালিয়ে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামে যুক্ত হন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

 

২০১৬ সালে গুলশান হামলার পর জিয়াকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে সরকার। তখন পুরস্কার ঘোষিত তামিম চৌধুরীসহ জঙ্গিদের কয়েকজন শীর্ষনেতা র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে নিহত হলেও জিয়ার খোঁজ মেলেনি।

 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, দণ্ডিত জিয়া অন্য কোনো দেশে পালিয়ে রয়েছেন বলে তথ্য রয়েছে তাদের কাছে। তবে র‌্যাব এখন অন্য তথ্য দিচ্ছে।

 

সোমবার র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২২ সালে কিশোরগঞ্জে আনসার আল ইসলাসের সঙ্গে একটি বৈঠকে জামাতুল আনসার নেতা আনিসুর রহমান মাহমুদের একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী আনিসুরকে ১৫ লাখ টাকা দেয় আনসার আল ইসলাম। পরে আরও টাকা দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।

 

চুক্তি অনুযায়ী জামাতুল আনসারের সদস্যদের আনসার আল ইসলাম আইটি ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেবে। বিনিময়ে আনসার আল ইসলামের সদস্যদের পার্বত্য অঞ্চলে অস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং অস্ত্র সরবরাহ করবে জামাতুল আনসার।

 

পরে আনিসুর কেএনএফ প্রধান নাথান বম ও সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংচুংয়ের সঙ্গে বৈঠক করে আনসার আল ইসলামের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে অবহিত করেন ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় করেন বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন।

 

লৌহজংয়ের বাড়ি তিন দিন আগে ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গিরা

রোববার রাত ৩টার দিকে লৌহজং উপজেলার বড় নওপাড়া গ্রামের একটি একতলা বাড়ি ঘিরে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় আনিসুর রহমান মাহমুদ (৩২) এবং তার দুই সহযোগী কাজী সিরাজ উদ্দীন ওরফে সিরাজ (৩৪) এবং মাহফুজুর রহমান বিজয় ওরফে বাবুল ওরফে জাম্বুলিকে (২৮)।

 

ওই বাড়ি থেকে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, উগ্রবাদী পুস্তিকা ও নগদ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান।

 

বাড়ির মালিক আনোয়ারা বেগমের স্বামী বদিউর রহমান মারা গেছেন, ছেলেরা আলাদা থাকায় বাড়িটি তিনিই দেখভাল করেন। আনোয়ারা বেগম জানান, তার একতলা ভবনের দুটি কক্ষ তিন দিন আগে ভাড়া নেন হাসান নামের একজন। এক পরিবারের সদস্য পরিচয় দিয়ে তিনজন পুরুষ বাসায় ওঠেন, পরিবারের নারী সদস্যরা পরে আসবেন বলে সে সময় তারা জানান।

 

ভাড়া ঠিক হয়েছিল এক হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিলসহ মোট ৫ হাজার টাকা। নতুন ভাড়াটেরা বলেছিল- জাতীয় পরিচয়পত্র দুই দিন পরে দেবে।

 

আনোয়ারা বলেন, রাত ৩টার দিকে হঠাৎ তার বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। পরে নতুন ভাড়াটেদের তিনজনকেই গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।