1. [email protected] : bijoy : bijoy Book
  2. [email protected] : News Room : News Room
  3. [email protected] : news uploader : news uploader
  4. [email protected] : prothombarta :
ওই ২ কিলোমিটারে সবার চোখ
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০১:৫৯ দিন

ওই ২ কিলোমিটারে সবার চোখ

  • পোষ্ট হয়েছে : শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০২৩

প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলো কিছুক্ষণ আগে। এ দিন শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় কাটানো সেই স্কুলে যায় ফলাফল জানতে, কেউবা বন্ধুদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে।

 

ঢোল ও ড্রামসহ বিভিন্ন বাজনা নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে সবাই। শেষ বেলার এই স্মৃতিটুকু ধরে রাখতে বন্ধুরা মিলে করে অনেক পরিকল্পনাও। তবে এবার আর স্কুলে গিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে যোগ দেয়া হচ্ছে না ঢাকার পরীক্ষার্থী মৌসুমির (ছদ্মনাম)। কারণ, বিএনপি ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমাবেশ ঘিরে অনেকের মতো তার মনেও রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

 

মৌসুমি এবার কাকরাইলের উইল্‌স‌ লিট্‌ল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। পরিবারের সাথে থাকে বিজয়নগর এলাকায়।আক্ষেপ নিয়ে সে বলে, ‘দুই দলের সমাবেশের মাঝের অংশে পড়েছে বিজয়নগর। কোনো ঝামেলা হলে এই এলাকাতেই হবে। তাই বাসা থেকে আজ বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।’

 

ক্ষোভ প্রকাশ করে মৌসুমি আরও বলে, ‘আমাদের ফল প্রকাশের সময় আগেই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। সমাবেশের তারিখ পরিবর্তন করে কাল দিতে পারতো। কালকেও তো সরকারি ছুটি আছে।’  প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সমাবেশের নিয়ে কয়েক দিন ধরে রাজনৈতিক মাঠে উত্তেজনার পারদ ঊর্ধ্বমুখী।

 

এই সমাবেশে নিয়ে কয়েকদিন ধরে নাটকও কম হয়নি। অবশেষে শুক্রবার (২৮ জুলাই) নিজেদের চাওয়া স্থানেই সমাবেশ করবে দুই দল। দুপুরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ আর নয়াপল্টনে বিএনপি। দুটি সমাবেশস্থল মাত্র দুই কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে হবে।

 

এজন্য সারা দেশের মানুষের চোখ এখন ওই দুই কিলোমিটারে কী হতে যাচ্ছে সেদিকে।এতে সহিংসতার আশঙ্কা করছে সাধারণ মানুষ। উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। বিশেষ করে ঢাকার এসএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাকরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি দুঃশ্চিন্তায়। স্কুলে ফলাফল দেখতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনেকে।

 

শান্তিনগরের বাসিন্দা আরশাদুল ইসলাম। তার ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। কিন্তু ফলাফল দেখতে স্কুলে যাবেন না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। বলেন, সবারই ইচ্ছা থাকে এমন দিনে একসাথে আনন্দ করার। কিন্তু এবার পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। এতে একটু মন খারাপ থাকলেও সবাইকে মেনে নিতে হবে। ঘরে বসেই নিজেদের মতো ফলাফল দেখে আনন্দ করবেন বলেই জানালেন এই বেসরকারি চাকরিজীবী।

 

আরশাদুলের মতো নয়াপল্টনের ব্যবসায়ী মাহমুদুল হাসানও উদ্বিগ্ন সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে।বেশ কয়েকদিন থেকেই টেনশনে আছি। শুক্রবার সমাবেশের জন্য দোকান বন্ধ রাখব ঠিকই কিন্তু তাও যদি সংঘাত হয়! কাছাকাছি জায়গায় সমাবেশ দেয়াতে এই ভয়টা বেশি কাজ করছে। কী যে হবে বুঝতেসি না।

 

দৈনিক বাংলা এলাকার বাসিন্দা উম্মে কুলসুম অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে আজ যে সংঘাত হবে না- সে শঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন থেকে রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত। কয়েকদিন আগেও ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় ঝামেলা হয়েছে। তাই এদিনও ঝামেলা হতে পারে। তার ওপর দুইটা সমাবেশস্থল বাসার কাছে হওয়ায় বেশি ভয়ে আছি।’

 

যদিও কার্মদিবসে সমাবেশ না হওয়ায় কিছুটা স্বস্তিতে আছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। বৃহস্পতিবারের সমাবেশ একদিন পিছিয়ে নেয়ার ঘোষণাকে ‘খুবই প্রশংসনীয়’ বলে মন্তব্য করেন কেউ কেউ। এদেরই একজন শাহিদা আক্তার। তিনি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। জানান, যে উদ্বেগ ছিল, তা কমে গেছে। অফিস না থাকায় বের হতে হবে না। তাতে কিছুটা হলেও স্বস্তি আনবে।

ঢাকা ফাঁকা, প্রবেশপথে তল্লাশি

এদিকে সকালে ঢাকার রাজপথ তুলনামূলক ফাঁকা। রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা নেই বললেই চলে। মানুষের উপস্থিতিও কম। আর যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ, চলছে ব্যাপক তল্লাশি।

গতকাল রাত থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার এলাকায় পুলিশের নিয়মিত অস্থায়ী চেকপোস্টে তল্লাশি কার্যক্রম চলছে। এ সময় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে অর্ধ শতাধিক ব্যক্তিকে।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর বিভাগ) আব্দুল্লাহ হিল কাফী জানান, নিয়মিত তল্লাশির অংশ হিসেবে এখানে সবসময় তল্লাশি চালানো হয়। এ ছাড়া সাভারের বিরুলিয়া, আশুলিয়ার ধউর, জিরানী, জিরাবো ও বাইপাইল এলাকায় চেকপোস্ট কার্যক্রম চলছে। আজ ঢাকায় দুটি দলের কর্মসূচি থাকায় কেউ যাতে কোনো ধরনের নৈরাজ্য চালাতে না পারে তাই তল্লাশিতে জোর দিচ্ছি।

 

এ সময় বিভিন্ন পরিবহনে তল্লাশি চালিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আটক করা হয়েছে। তবে তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি  নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি তিনি।

জনসমাগম দেখাতে প্রস্তুত দুই দল

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে তীব্র হচ্ছে রাজনৈতিক সংকট। রাজপথে মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। উভয়ই চায় যে কোনো মূল্যে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ রাখতে। সে লক্ষ্যে একদিন পিছিয়ে আজ নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। তাদের মোকাবিলায় বায়তুল মোকাররমে পাল্টা সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন দলের তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন।
বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে আসতে পারে আন্দোলনের গতি পাল্টানোর ঘোষণা। আর বিএনপির সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জাগরণ সৃষ্টি করাই আওয়ামী লীগের আজকের সমাবেশের মূল টার্গেট।

 

তাইতো বিএনপি-জামায়াতের অপতৎপরতা থেকে সতর্ক থাকতে এবং যেকোনো সহিংসতা প্রতিরোধে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সতর্ক পাহারায় থাকার নির্দেশ দেয়া আছে ক্ষমতাসীনদের। পাশাপাশি ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও মহাসমাবেশে আসতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দলটির টার্গেট দুই লাখ লোকের জমায়েত করা।

 

আর বিএনপির কর্তারা বলছেন, এবারের মহাসমাবেশ থেকে নির্দলীয় সরকারের দাবি মানার জন্য বর্তমান সরকারকে একটা সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতে পারে। তাদেরও টার্গেট বিশাল জনসমাগম করে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করা।

 

এসব কর্মসূচিতে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে দল দুটি। সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসছেন। সকাল থেকেই নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে খণ্ড খণ্ড মিছিলে জড়ো হতে শুরু করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। আর বায়তুল মোকাররমের সামনে জড়ো হচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।

 

বিএনপির সমমনা ৩৬টি দল ছাড়াও যুগপৎ আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে এবি পার্টি আজ রাজপথে থাকবে। দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্তত ৪০টি দল একই দিন রাজধানীতে কর্মসূচি পালন করবে।

 

একদিকে আশ্বস্ত, অন্যদিকে হুংকার

 

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বৃহস্পতিবার দুপুরে দাবি করেছেন, আজ শুক্রবারের মহাসমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। কিন্তু কেউ পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করলে আমরাও ছাড় দিবো না।

আর নেতাকর্মীদের সব বাঁধা অতিক্রম করে সমাবেশে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, আমাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ।

 

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, রাতে এমন কোন পরিস্থিতি তৈরি করবেন না, যাতে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন হয়।রাতে বিএনপির সমাবেশের মঞ্চ নির্মাণ পরিদর্শনে এসে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

 

বলেন, ঢাকার প্রতিটি এলাকাতে ডাইনি শিকারের মতো আচার-আচরণ করছে পুলিশ। সমাবেশ ঘিরে অসংখ্য নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এখানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েও তারা অগণতান্ত্রিক আচরণ করছে।

 

পুলিশ সার্বিক সহায়তা না করে সরকারের হয়ে কাজ করছে।একইভাবে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা প্রতিরোধে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ক্ষমতাসীনদের সতর্ক পাহারায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায় থেকে।

 

যদিও আওয়ামী লীগ কোনো সংঘাতে যাবে না বলে মঙ্গলবারের যৌথ সভায় বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা সংঘাত করব না। আমরা মাঠে সতর্ক থাকব। যারা সংঘাত করতে আসবে, তাদের প্রতিহত করব। নির্বাচন পর্যন্ত সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

 

একই সুরে কথা বললেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। বলেন, যারা উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে বাধা হবে, তাদেরই প্রতিরোধ করা হবে।  আন্দোলনের নামে রাজনীতির মাঠ অরাজকতা করার সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না।

 

 

নজরদারিতে দুই কিলোমিটার
আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে মহাসমাবেশ করার অনুমতি দিয়ে এবার নজরদারিতে নেমেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বিশেষ করে কাকরাইল, পল্টন, বিজয়নগর ও ফকিরাপুলের প্রতিটি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। অলিগলিতে সাদা পোশাকে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি। ঢাকায় প্রবেশমুখের সবকটি পয়েন্টে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। যানবাহনে চলছে ব্যপক তল্লাশি।

 

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, দুই দলের সমাবেশকে ঘিরে অন্তত ৩০ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। র‍্যাব, আনসার, এপিবিএনের থাকবে অন্তত পাঁচ হাজার সদস্য। যাদের প্রায় সবার নজর থাকবে বিএনপির সমাবেশের দিকে। সেখানে কোন ধরণের সংঘাতের খবর পেলেই অ্যাকশনে যাবে পুলিশ।এছাড়া, বিজিবি থাকবে স্ট্যান্ডবাই। বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে তারা মাঠে নামবে। গোয়েন্দা সংস্থা, আনসার, বিজিবি, র‍্যাব ও ঢাকা হাইওয়ে রেঞ্জের কর্মকর্তারা কন্ট্রোল রুমে বসে দুই সমাবেশে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখবেন।

 

যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসবাইকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে সমাবেশের আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘সবাই যদি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি, জানমালের ক্ষতি, ভাঙচুর করেন কিংবা জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করেন, তখন আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর যার যা কাজ বা অর্পিত দায়িত্ব, তারা তা পালন করবেন। নিরাপত্তা বাহিনী অনেক সুদক্ষ, অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে একটি সুন্দর জায়গায় নিয়ে আসতে তারা রাতদিন সহযোগিতা করছে।’

Facebook Comments Box

শেয়ার দিয়ে সাথেই থাকুন

print sharing button
এ বিভাগের অন্যান্য খবর