ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেনাপোলের সর্বত্র চলছে বিএনপি নেতা মনিরের বালি উত্তোলনের মহোৎসব

  • পোষ্ট হয়েছে : ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২
  • / ১০ বার দেখা হয়েছে

প্রথমবার্তা প্রতিনিধি (ইয়ানূর রহমান) : বেনাপোলের সর্বত্র চলছে বিএনপি নেতা মনিরের বালু উত্তোলনের মহোৎসব। শার্শা উপজেলার সকল প্রান্তের বালু খেকোদের সাথে পাল্লা দিয়ে বাহাদুরপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে একযোগে চলছে বেনাপোলের এ বিএনপি নেতা মনির হোসেনের বালু উত্তোলনের রমরমা অর্থ বাণিজ্য।

উপজেলা প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তার সাথে যোগ সাজস থাকায় লাগামহীনভাবে বালু উত্তোলন করে আওয়ামীলীগ শাসনামলের মাত্র ১৪ বছরে সে ফুটপথের বাসিন্দা থেকে কোটিপতি বনে গেছে। সে সাথে অবৈধ বালু উত্তোলনের টাকার গরমে বিএনপির দাতা সদস্যের তালিকায় তার স্থান বর্তমানে শীর্ষে অবস্থান করছে। এক সময়ের টোকাই কর্মী থেকে পদমর্যাদা বেড়ে দলীয় নেতার স্থান পাওয়ায় মনিরের আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন এলাকাবাসী।

এমন ধরণের বিস্তর গুমরে থাকা অভিযোগ নিয়ে মনিরের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন এলাকাবাসী। মনির হোসেন বেনাপোল পোর্ট থানার ভবেরবেড় গ্রামের মৃত শুকুর আলীর ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, বেনাপোল পোর্ট থানার বাহাদুরপুর এলাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মনির হোসেন নামের এক অবৈধ বালু ব্যবসায়ী নির্ভয়ে বাঁধাহীনভাবে চাষী জমি থেকে বালু উত্তোলন করছে। দীঘদিন ধরে তার বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলতে থাকায় স্থানীয় জনমনে ব্যাপকভাবে আলোচনা সমালোচনা, ক্ষোভ ও রম্য রসের গল্পে পরিণত হয়েছে।

এলাকাবাসী বলেছেন, সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা অজ্ঞাত কারণে মনিরকে নির্ভয়ে বালি উত্তোলনের সুযোগ করে দেওয়ায় দিনে দিনে এলাকার ফসলি জমিগুলো কেটে সাঁবাঢ় করে দিচ্ছে সে। মনে হচ্ছে মনির হোসেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে ফুটপথের বাসিন্দা থেকে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনেগেছে।

কথা হয় জনৈক ব্যক্তির সাথে। তিনি জানান, বিএনপি নেতা মনির হোসেন শার্শা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা কার্যালয়ের উর্দ্ধতন এক কর্মকর্তাকে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলসহ বাহাদুরপুর এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। দীর্ঘদিন যাবত সে এলাকার নীরিহ জমির মালিকদের ফুঁসলিয়ে তাদেরকে পুকুর কেটে দেওয়ার নাম করে ড্রেজার ও স্কোভেটরের মাধ্যমে তুলে নিয়ে যাচ্ছে মহামূল্যমান খনিজ সম্পদ বালি।

প্রতিনিয়ত যদি সে লাগামহীনভাবে ফসলি জমি থেকে ড্রেজার মেশিন চালিয়ে বালি উত্তোলন করতে থাকে তাহলে একসময়ে পার্শবর্তী অন্যান্য ফসলি জমিগুলো ভূ-গর্ভে চলে গিয়ে পতিত জমিতে পরিণত হবে। সেখানে না হবে মাছ, না হবে ফসল। তার বালি বিক্রির কালো টাকার ছড়াছড়ি আর অবৈধ ক্ষমতার দাপটে এলাকাবাসী টু-শব্দটি করতে পারে না
বলে জানান তিনি।

স্থানীয়রা আরো জানান, বেনাপোলের ভবারবেড় ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা মনির হোসেনের তান্ডবলীলায় এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলের শতশত বিঘা ফসলি জমি থেকে বালি উত্তোলন ও মাটি খনন করা হচ্ছে।

তার নিজস্ব দুইটি স্কোভেটর ও অগণিত ড্রেজার মেশিন থাকায় এলাকার সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে ফসলি জমি নিয়ে সেখানে মাছ চাষের উপযোগি ফ্রি পুকুর কেটে দেওয়ার শর্তে তুলে নিয়ে যাচ্ছে মহা মূল্যমান খনিজ সম্পদ বালি।

মাঝে মধ্যে এলাকার কেউ বাধার সৃষ্টি করলে দেওয়া হচ্ছে নাম মাত্র অংকের টাকা নতুবা তার পোষ্য পেটোয়া বাহিনী দিয়ে হত্যার ভয়। যেকারণে মনির হোসেন দিনদিন ধরে মহামূল্যবান খনিজ সম্পদ বালির টাকায় টাকার পাহাড় করে বালি মহালের ডন খ্যাতি অর্জণ করেছে। মুঠোফোনে কথা হয় বালুমহালের ডন খ্যাত মনির হোসেনের সাথে।

সে বাহাদুরপুর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলনের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। বলেছে, একসময় দেখা করবো। এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা শ্রী নারায়ন চন্দ্র পাল অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়টি দেখবেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।

তবে, এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে জানানো হলেও এপর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বালু তোলার প্রতিবাদে প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝড় উঠলেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। ফলে, দীর্ঘদিন যাবত বালু উত্তোলনের কারণে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি ইতোমধ্যে ভূ-গর্ভে বিলীন হতে চলেছে। দিন দিন পতিত জমিতে পরিণত হচ্ছে এলাকার মানুষের হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি।

সরেজমিনে দেখা যায়, শার্শা উপজেলার বেনাপোল পোর্ট থানার বাহাদুর ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজার মেসিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালুর স্তুপ ও বিক্রয় ক্রেন্দ্র করা হয়েছে বাহাদুরপুর বাওড়ের খালধরে শেষের প্রান্তে সোনামুখো বিল নামক স্থানে। প্রতিদিন কয়েকটি মালিকানা মাছের ঘেরে অসংখ্য ড্রেজার মেশিন বসিয়ে হাজার হাজার ফুট সরকারি বালু লুট করে বিক্রি করছে এই অসাধু বালু ব্যবসায়ী।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের বালুমহল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উম্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না।

এ ছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ।

ট্যাগ :

শেয়ার দিয়ে সাথেই থাকুন

বেনাপোলের সর্বত্র চলছে বিএনপি নেতা মনিরের বালি উত্তোলনের মহোৎসব

পোষ্ট হয়েছে : ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২

প্রথমবার্তা প্রতিনিধি (ইয়ানূর রহমান) : বেনাপোলের সর্বত্র চলছে বিএনপি নেতা মনিরের বালু উত্তোলনের মহোৎসব। শার্শা উপজেলার সকল প্রান্তের বালু খেকোদের সাথে পাল্লা দিয়ে বাহাদুরপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে একযোগে চলছে বেনাপোলের এ বিএনপি নেতা মনির হোসেনের বালু উত্তোলনের রমরমা অর্থ বাণিজ্য।

উপজেলা প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তার সাথে যোগ সাজস থাকায় লাগামহীনভাবে বালু উত্তোলন করে আওয়ামীলীগ শাসনামলের মাত্র ১৪ বছরে সে ফুটপথের বাসিন্দা থেকে কোটিপতি বনে গেছে। সে সাথে অবৈধ বালু উত্তোলনের টাকার গরমে বিএনপির দাতা সদস্যের তালিকায় তার স্থান বর্তমানে শীর্ষে অবস্থান করছে। এক সময়ের টোকাই কর্মী থেকে পদমর্যাদা বেড়ে দলীয় নেতার স্থান পাওয়ায় মনিরের আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন এলাকাবাসী।

এমন ধরণের বিস্তর গুমরে থাকা অভিযোগ নিয়ে মনিরের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন এলাকাবাসী। মনির হোসেন বেনাপোল পোর্ট থানার ভবেরবেড় গ্রামের মৃত শুকুর আলীর ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, বেনাপোল পোর্ট থানার বাহাদুরপুর এলাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মনির হোসেন নামের এক অবৈধ বালু ব্যবসায়ী নির্ভয়ে বাঁধাহীনভাবে চাষী জমি থেকে বালু উত্তোলন করছে। দীঘদিন ধরে তার বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলতে থাকায় স্থানীয় জনমনে ব্যাপকভাবে আলোচনা সমালোচনা, ক্ষোভ ও রম্য রসের গল্পে পরিণত হয়েছে।

এলাকাবাসী বলেছেন, সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা অজ্ঞাত কারণে মনিরকে নির্ভয়ে বালি উত্তোলনের সুযোগ করে দেওয়ায় দিনে দিনে এলাকার ফসলি জমিগুলো কেটে সাঁবাঢ় করে দিচ্ছে সে। মনে হচ্ছে মনির হোসেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে ফুটপথের বাসিন্দা থেকে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনেগেছে।

কথা হয় জনৈক ব্যক্তির সাথে। তিনি জানান, বিএনপি নেতা মনির হোসেন শার্শা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা কার্যালয়ের উর্দ্ধতন এক কর্মকর্তাকে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলসহ বাহাদুরপুর এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। দীর্ঘদিন যাবত সে এলাকার নীরিহ জমির মালিকদের ফুঁসলিয়ে তাদেরকে পুকুর কেটে দেওয়ার নাম করে ড্রেজার ও স্কোভেটরের মাধ্যমে তুলে নিয়ে যাচ্ছে মহামূল্যমান খনিজ সম্পদ বালি।

প্রতিনিয়ত যদি সে লাগামহীনভাবে ফসলি জমি থেকে ড্রেজার মেশিন চালিয়ে বালি উত্তোলন করতে থাকে তাহলে একসময়ে পার্শবর্তী অন্যান্য ফসলি জমিগুলো ভূ-গর্ভে চলে গিয়ে পতিত জমিতে পরিণত হবে। সেখানে না হবে মাছ, না হবে ফসল। তার বালি বিক্রির কালো টাকার ছড়াছড়ি আর অবৈধ ক্ষমতার দাপটে এলাকাবাসী টু-শব্দটি করতে পারে না
বলে জানান তিনি।

স্থানীয়রা আরো জানান, বেনাপোলের ভবারবেড় ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা মনির হোসেনের তান্ডবলীলায় এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলের শতশত বিঘা ফসলি জমি থেকে বালি উত্তোলন ও মাটি খনন করা হচ্ছে।

তার নিজস্ব দুইটি স্কোভেটর ও অগণিত ড্রেজার মেশিন থাকায় এলাকার সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে ফসলি জমি নিয়ে সেখানে মাছ চাষের উপযোগি ফ্রি পুকুর কেটে দেওয়ার শর্তে তুলে নিয়ে যাচ্ছে মহা মূল্যমান খনিজ সম্পদ বালি।

মাঝে মধ্যে এলাকার কেউ বাধার সৃষ্টি করলে দেওয়া হচ্ছে নাম মাত্র অংকের টাকা নতুবা তার পোষ্য পেটোয়া বাহিনী দিয়ে হত্যার ভয়। যেকারণে মনির হোসেন দিনদিন ধরে মহামূল্যবান খনিজ সম্পদ বালির টাকায় টাকার পাহাড় করে বালি মহালের ডন খ্যাতি অর্জণ করেছে। মুঠোফোনে কথা হয় বালুমহালের ডন খ্যাত মনির হোসেনের সাথে।

সে বাহাদুরপুর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলনের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। বলেছে, একসময় দেখা করবো। এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা শ্রী নারায়ন চন্দ্র পাল অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়টি দেখবেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।

তবে, এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে জানানো হলেও এপর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বালু তোলার প্রতিবাদে প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝড় উঠলেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। ফলে, দীর্ঘদিন যাবত বালু উত্তোলনের কারণে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি ইতোমধ্যে ভূ-গর্ভে বিলীন হতে চলেছে। দিন দিন পতিত জমিতে পরিণত হচ্ছে এলাকার মানুষের হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি।

সরেজমিনে দেখা যায়, শার্শা উপজেলার বেনাপোল পোর্ট থানার বাহাদুর ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজার মেসিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালুর স্তুপ ও বিক্রয় ক্রেন্দ্র করা হয়েছে বাহাদুরপুর বাওড়ের খালধরে শেষের প্রান্তে সোনামুখো বিল নামক স্থানে। প্রতিদিন কয়েকটি মালিকানা মাছের ঘেরে অসংখ্য ড্রেজার মেশিন বসিয়ে হাজার হাজার ফুট সরকারি বালু লুট করে বিক্রি করছে এই অসাধু বালু ব্যবসায়ী।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের বালুমহল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উম্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না।

এ ছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ।