বিএনপির ‘ফাইনাল খেলা’ শঙ্কা-সম্ভাবনায়
- পোষ্ট হয়েছে : ১০:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৩
- / ৪৯ বার দেখা হয়েছে
প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আগামীকাল ২৮ অক্টোবর (শনিবার) থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির শেষ ধাপের আন্দোলন।
দিনটিতে মহাসমাবেশ ডেকেছে দলটি। আর এ সমাবেশ সফল করতে দলের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ থাকলেও নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে সংশয়। বিএনপির নেতাকর্মীদের একাংশ বলছেন, চূড়ান্ত আন্দোলনে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে কোনো প্রশ্ন না থাকলেও দায়িত্বশীলদের নিয়ে এক ধরনের আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্রমতে, মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতনের নতুন আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীরাও সেভাবে সুসংগঠিত হয়ে ঢাকায় পৌঁছেছেন।
তবে, এবারের আন্দোলনের ফসল ঘরে উঠবে কি না তা নিয়ে সংশয়-সন্দেহের অন্ত নেই। জানা গেছে, বিএনপিসহ যে ৩৭ রাজনৈতিক দল সরকারবিরোধী এক দফার আন্দোলনে রয়েছে- তাদের মধ্যে পর্যন্ত কয়টা দল আন্দোলনে থাকবেন নাকি শেষ পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে আঁতাত গড়ে তুলবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
পাশাপাশি দলের মধ্যেও রয়েছেন সরকার ঘনিষ্ঠ নেতাকর্মীরা। দলের নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও রয়েছে। এছাড়া ভারত ঘনিষ্ঠ, চীন ঘনিষ্ঠ নেতাদের ভূমিকা কী থাকবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। চূড়ান্ত আন্দোলনের সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ দায়িত্বশীল নেতারা গ্রেফতার হলে কী হবে তা নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা রয়েছে।
গত বছরের ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানের সময় সেখানে বিএনপির মহাসচিব ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা ছিলেন।
এবারও যদি সেই একই পরিস্থিতি হয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে নেতা কর্মীরা না থাকেন তাহলে আন্দোলনের ঘরে উঠবে কি না- সে নিয়েও ভাবনা রয়েছে। বা গত ২৯ জুলাইয়ের মতো যদি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস তার বাসা থেকে বের হতে না পারেন, নজরুল ইসলাম খান, আব্দুল মঈন খান যথাসময়ে নির্ধারিত স্পটে না যান তাহলে কী হবে?
আন্দোলনের মাঠে সিনিয়ররা থাকলে জুনিয়ররা উৎসাহ-উদ্দীপনা পান। সিনিয়র নেতারা যদি মাঠে থাকেন সে ক্ষেত্রে জুনিয়ররা মাঠ দখলের জন্য প্রাণপণ চেষ্টায় ত্রুটি করে না। এছাড়া ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি কতটা আন্দোলনমুখী তা নিয়েও বিতর্ক কম নেই।
এদিকে দলটির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দলের নেতারা আভ্যন্তরীণ কোন্দল ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমেছে। সরকারবিরোধী সব শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। দায়িত্বশীল গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মী গ্রেফতার হলে কয়েক স্তরের বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো নেতাকর্মীর দায়িত্ব পালনে গাফিলতি থাকলে সে যে পর্যায়ে নেতা হোক না কেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে দলে।
এছাড়া বিগত ওয়ান/ইলেভেনের সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান এবং ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু নেতাকর্মীদের হাতে যেভাবে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
উত্তরাঞ্চলীয় একটি জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এক নেতা জাগো নিউজকে বলেন, চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে। তবে, কর্মসূচি নিয়ে এখনো নেতাকর্মীরা অন্ধকারে। এটা দলের সিদ্ধান্তহীনতা নাকি দলের কৌশল সে নিয়ে একধরনের সন্দেহ রয়েছে।
তিনি বলেন, এর আগে মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের গাফিলতি দেখেছি, সমন্বয়হীনতা দেখেছি। একই পরিস্থিতি গত ২৯ জুলাই কর্মসূচিতেও ছিল। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে। সে কারণে একজনের সন্দেহ আশঙ্কা থেকে যায় আন্দোলনের ফসল নিয়ে।
সরকার পতনের শেষধাপের কর্মসূচি অবশ্যই সফল হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির দপ্তর সম্পাদক সাইদুর রহমান মিন্টু জাগো নিউজকে বলেন, আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে নানা আশঙ্কা থাকে। তারপরও আমরা আশাবাদী মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা সামনের দিকে এগোবো। আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আন্দোলনের সফলতা নিয়ে বিন্দুমাত্র শঙ্কা নেই। সফলতার ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
অবশ্য সরকারের পতনের চলমান আন্দোলন সংগ্রামে নিজেদের বিজয় সুনিশ্চিত দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের প্রতিশোধ একটাই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, এজন্য এ মুহূর্তে সরকারকে পদত্যাগ করানো। আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। এ আন্দোলনে আমাদের বিজয় নিশ্চিত।