কোটা আন্দোলন: পক্ষে-বিপক্ষে তারকারা
- পোষ্ট হয়েছে : ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪
- / ৪১ বার দেখা হয়েছে
প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার চেয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল সারাদেশ। প্রথমদিকে শোবিজ তারকারা এ নিয়ে চুপ থাকলেও সোমবার (১৫ জুলাই) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর সরব হয়েছেন অনেকে।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে কোটা সংস্কারের পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়েছেন শোবিজ অঙ্গনের একাধিক তারকা। আবার কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিপক্ষেও পোস্ট দিয়েছেন কেউ কেউ।
চিত্রনায়িকা পরীমণি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে এক নারী শিক্ষার্থীর রক্তমাখা একটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতায় আপনার জবান বন্ধ থাকলে আপনি মুনাফিক।’
চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী তার পোস্টে লিখেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরবে কেন?’
অভিনেত্রী রুনা খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক নারী শিক্ষার্থীর রক্তমাখা ছবি শেয়ার করেছেন। পোস্টে তিনি কিছু লেখেননি ঠিকই, কিন্তু ছবির উপরে ‘হদয়ভাঙা’ ইমোজি দিয়ে বুঝিয়েছেন শিক্ষার্থীদের ওপর এই হামলার ঘটনায় তিনি ব্যথিত।
অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আর কত রক্ত দিলে স্বাধীন হবে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ?’
অপর এক পোস্টে অভিনেতা নিলয় আলমগীর প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আজকের ছাত্র-ছাত্রীরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারাই একটা সময় দেশের হাল ধরবে। এত এত ছাত্র-ছাত্রী ভুল দাবি করতে পারে না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও বলছি, দয়া করে কোটা সংস্কার করে দিন। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারকে যে সম্মান এবং ভালোবাসা আপনি সব সময় দেখিয়েছেন, তার জন্য আমরা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের কাছে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবার এখন হাসির পাত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের জায়গাটা ঠিক রাখতে হলেও কোটা সংস্কার মেনে নিন। আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের এই দুরবস্থা সহ্য করার মতো না। পুরো জাতি আপনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে।’
শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর সালমান মুক্তাদির। সালমান মুক্তাদির লিখেছেন, ‘এমন কোনো ছাত্র আছেন, যিনি হামলার শিকার হয়েছেন অথবা হলে ঢুকতে পারছেন না? আমি আপনাদের খেয়াল রাখব।… কারও যদি থাকার জায়গার প্রয়োজন হয় অথবা চিকিৎসাসেবার প্রয়োজন হয়, আমি আছি।… আমি সত্যিই ভেঙে পড়েছি, বিব্রত বোধ করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জবাব চেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক একাউন্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্তমাখা লোগো পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘আমার ক্যাম্পাস রক্তাক্ত কেন? শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরবে কেন?’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে নির্মাতা সুমন আনোয়ার লিখেছেন, ‘দুর্দান্ত ঢাকা, উত্তেজিত দেশ। ঘুরে দাঁড়াবেই বাংলাদেশ।’
নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘একের পর এক ভুল। সব পক্ষেরই ভুল। যুক্তি, চিন্তা, স্ট্যাটিকস- সব ভুলে বসে আছি সবাই। হুজুগ আর ক্ষমতা লড়ছে। সংলাপ বসে আছে অসহায় হয়ে।’
নির্মাতা খিজির হায়াত খান লিখেছেন, ‘আমাদের আগামীরা আজকে দেশব্যাপী রাজপথে। ওদের স্লোগান নিয়ে অনেক প্রশ্ন কিন্তু কেন এই স্লোগান সেটা নিয়ে কোন কথা নাই। ন্যায্য অধিকারের আন্দোলন কাউকে রাজাকার বানায় না, বরং ওদের হাত ধরেই স্বাধিকার আসে। আমি ওদের পক্ষে দাঁড়ালাম।’
নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত লিখেছেন, ‘এরা বুক ফুঁলিয়ে যতই ‘জয় বাংলা’ বলে চেঁচাক, ১৯৭১-র মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে ২০২৪-র আজকের এই ছাত্রলীগের কোনো ধরণের সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করি না। আজ এরা চেতনাহীন, পথভ্রষ্ট, অর্থলোভী পঙ্গপাল ছাড়া কিছুই নয়। আন্দোলনরত ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনায় না গিয়ে এই পঙ্গপাল বাহিনী লেলিয়ে দেওয়া কোন আদর্শের রাজনীতি আমি জানি না। তবে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি বা দর্শনের সাথে তার কোন মিল নেই, তা ঢের বলতে পারি। এই পঙ্গপাল পুষতে পুষতে কবে গোটা জাতিই চেতনাহীন, পথভ্রষ্ট, ও অর্থলোভী হয়ে যায়!’
চিরকুট ব্যান্ডের দলনেতা শারমিন সুলতানা সুমি লেখেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, আমাদের প্রজন্ম, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সকলের নিরাপত্তা ও সুদিন; সদ্বিবেচনার সঙ্গে নিশ্চিত করার বিনীত অনুরোধ রইল।’ শিক্ষার্থীদের সমর্থন দিয়ে চিরকুটের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকেও পোস্ট করা হয়েছে।
ফেসবুক পোস্টে কোটা সংস্কারের এই আন্দোলনে ছাত্রদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন নির্মাতা আশফাক নিপুন। পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে শহীদ সম্বোধন করে তার দেওয়া ‘যতদিন বেঁচে আছেন মেরুদণ্ড নিয়ে বাঁচুন’ স্লোগানের নিচে তিনি লিখেছেন, ‘যতদিন বেঁচে আছি মেরুদণ্ড নিয়ে বাঁচি।’
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ফেসবুকে এই প্রসঙ্গে শোবিজের মানুষদের নীরব থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্মাতা মিশুক মনি।
অনেক শোবিজ তারকা আবার কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। মিছিলে ‘রাজাকার’ স্লোগান দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছেন।
লেখক ও নির্দেশক মাসুম রেজা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যারা একাত্তরে পরাজিত হলো তাদের পরিচয়ে নিজেদেরকে পরিচিত করছেন! কী দারুণ মেধাবী আপনারা! এত মেধা আপনাদের কোন প্রেতাত্মা সপ্লাই করছে!’
অভিনেতা মারজুক রাসেল সংঘর্ষের একটি ছবি পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘দুইপক্ষই ছাত্র তবে শিক্ষা আলাদা।’
অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি লিখেছেন, ‘যারা নিজেদের রাজাকার বলতেও দ্বিধা করে না, আবার তারাই সরকারি চাকরির জন্য কোটা চায়, তাদের হাতে দেশ গেলে কি হবে সেটাই ভাবছি।’
অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান লিখেছেন, ‘কোটা সংস্কার হতেই পারে।..কিন্তু হাজারো সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের এই আন্দোলনকে সুকৌশলে যেদিকে প্রবাহিত করা হলো তা দেখে এটাই স্পষ্ট এর মাস্টারমাইন্ড কারা।’
অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হচ্ছে, এমন দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে অভিনয়শিল্পী সংঘ।