প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতার এই সময়ে ভবিষ্যতের ধকল মোকাবিলায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্বলদের জন্য সহনশীলতা তৈরিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আবশ্যক।

শুক্রবার (২১ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপে (জিসিআরজি) ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করে বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন।

চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর আবারও জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রলম্বিত যুদ্ধ এবং আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে চলেছে। যুদ্ধের প্রতিটি দিন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে ও বিশ্বের দূরপ্রান্তে অনেক জীবন কেড়ে নিচ্ছে এবং ধ্বংস করছে।

তিনি আরও বলেন, দুঃখজনকভাবে আমরা আজকে যখন ক্রমবর্ধমান সংকট ও মানবতার ওপর বিধ্বংসী প্রভাব নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি, তখন ইউক্রেনে সংঘাত চলছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিদিন যুদ্ধে নতুন নতুন অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে যা আরও বেশি ধ্বংস ডেকে আনছে এবং সারাবিশ্বের মানুষের জীবনে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। দারিদ্র্য ও বৈষম্য তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দরিদ্র দেশগুলোর ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে। এসব সমস্যা বিশ্বজুড়ে খাদ্য, শক্তি ও অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়িয়েছে, যার ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অগ্রগতিতে বিলম্ব হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জ্বালানি ও খাদ্য আমদানিকারক দেশ হিসেবে ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয়, মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপে ভুগছে। আমাদের জরুরিভাবে একটি সংস্কারকৃত আন্তর্জাতিক আর্থিক কাঠামো প্রয়োজন যা স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিনাশর্তে রেয়াতি, স্বল্প-মূল্যের, স্বল্প সুদের তহবিলে প্রবেশাধিকারসহ আর্থিক সুবিধা দেবে। ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবশ্যই জরুরি অবস্থার সময় আইএমএফের এসডিআর তহবিলের ন্যায়সংগত অ্যাক্সেসসহ সংকট ও বিপর্যয়কালে তহবিলে সহজ অ্যাক্সেস থাকতে হবে। এছাড়া, আইএফআই ও এমডিবি থেকে নিম্ন সুদে তহবিল প্রাপ্তির সুযোগ থাকতে হবে। ’

তিনি বলেন, যে কারণগুলো খাদ্যের মূল্য ও অ্যাক্সেসকে প্রভাবিত করে- যেমন রপ্তানি বিধিনিষেধ, মজুদ ও সরবরাহ চেইন বিকৃতি- এসবের সুরাহা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আমরা খাদ্য সরবরাহের উন্নতিতে (জাতিসংঘ) মহাসচিবের বাজার উন্মুক্ত রাখা, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা অপসারণ ও খাদ্য মজুদ ছেড়ে দেওয়ার আহ্বানকে পূর্ণ সমর্থন করি।

প্রধানমন্ত্রী ব্ল্যাক সী ইনিশিয়েটিভের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, মানুষকে খাদ্য দিতে ও জীবন বাঁচাতে এটি আরও সম্প্রসারণ করা দরকার। অভ্যন্তরীণ জ্বালানি সংমিশ্রণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে আমদানি হ্রাসের পাশাপাশি জ্বালানি শক্তিকে বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে৷ আমাদের সরকার নীতি সহায়তা প্রদান করে এবং জ্বালানি খাতে ও সবুজ জ্বালানির রূপান্তরে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে জ্বালানির রূপান্তরকে সহায়তা দেয়।

খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন পরস্পর সম্পর্কিত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা তার চতুর্থ চিন্তাধারায় বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পৌনঃপুন্য ও তীব্রতা বাড়ায়। এটি আবার কৃষি, খাদ্য উৎপাদন ও মানুষের বাস্তুচ্যুতিকে প্রভাবিত করে। তাই টেকসই জ্বালানি, খাদ্য উৎপাদনে উত্তরণ এবং জলবায়ু পদক্ষেপ অপরিহার্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কঠিন সময়ে জনগণের সহায়তায় আমাদের সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে আমাদের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর কিছু লক্ষণ প্রকাশ করে যা আমাদের স্বস্তির অনুভূতি দেয়। আমাদের এই পর্যায়ে পৌঁছাতে কিছু কঠিন আর্থিক ও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হয়, অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে আমাদের অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসদ্রব্য আমদানি সীমিত করতে হয়। জ্বালানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে হয়, সরকারি খাতে সামগ্রিক ব্যয় হ্রাস করতে হয়, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আইএমএফের কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা করতে হয়। আমাদের জনগণকে কোনো পতিত জমি অনাবাদি না রেখে খাদ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করতে হয়। আমরা গুরুত্ব সহকারে নিশ্চিত করেছি যে কোনো ব্যক্তি যাতে খাদ্যের অভাবের শিকার না হয়।

এ সময় আঙ্কাটাড মহাসচিব রেবেকা গ্রিনস্প্যানের সঞ্চালনায় ভার্চুয়ালি এ আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতারেস।

সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সাল, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বারবাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া মটলি পুরোধা হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

এছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার অর্থনৈতিক সমন্বয় বিষয়কমন্ত্রী এছাড়াও হার্তাতো, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রানিয়াম জয়শংকর, ডেনমার্কের উন্নয়ন সহযোগিতা ও বৈশ্বিক জলবায়ু বিষয়কমন্ত্রী ড্যান জার্গেনসেন, জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইয়ামাদা কেনেজি ও জার্মানির কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়কমন্ত্রী জোচেন ফ্ল্যাশবার্থ পর্যবেক্ষক হিসেবে বক্তব্য রাখেন।