ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নগরিকদের ওপর ব্যর্থতার দায় চাপাচ্ছে

  • পোষ্ট হয়েছে : ০১:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুলাই ২০২৩
  • / ৪৫ বার দেখা হয়েছে

প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। সারা দেশেই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। তবে রাজধানীতে এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। বুধবার রাজধানীতে ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর চলতি বছর (শুক্রবার পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকার দুই সিটিতে মারা গেছেন ১২২ জন। এ সময় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১৭ হাজার ৬৪৬ জন।

 

এই পরিস্থিতিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি। বরং লোক দেখানো কিছু কার্যক্রম করে বিতর্কিত হচ্ছে দুই সিটি। জরিমানা করে ব্যর্থতার দায় চাপাচ্ছে নগরবাসীর ওপর। দুই সিটির মশক নিধন অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় কোটি টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে।

 

কীটতত্ত্ববিদরা বলেছেন, আগে থেকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় বর্তমানে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এছাড়া সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে ব্যর্থ হচ্ছে দুই সিটির নানা উদ্যোগ। কীটতত্ত্ববিদদের মতে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মশক বিভাগকে ঢেলে সাজানো দরকার।

 

বছরের শুরুতে বিশেষ পরিকল্পনা, অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ, নিয়মিত মশার ঘনত্ব জরিপ, মশক কার্যক্রম তদারকি ও মূল্যায়ন এবং কীটনাশকের কার্যকারিতা পরীক্ষার নিয়মিত উদ্যোগ প্রয়োজন। শুধু অর্থ জরিমানা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে।

 

এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষক ও কীটতত্ত্বববিদ ড. জি এম সাইফুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমরা ঢালাওভাবে জরিমানা করার পরামর্শ দেইনি। প্রত্যেক বাসাবাড়িতে যেভাবে জরিমানা করা হচ্ছে সেটি অযৌক্তিক।

 

এ ক্ষেত্রে বাসাবাড়ির মালিকরা সহযোগিতা করবে না। তাদের সহযোগিতা না পেলে দুই সিটির এই উদ্যোগ সফল হবে না। এতে পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাবে। সেজন্য ঢালাওভাবে জরিমানা না করাই ভালো।

 

তিনি বলেন, ‘বিশেষ অভিযানে প্রত্যেক বাসাবাড়িতে চেক করা দরকার। অন্যান্য দেশও এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। যেটাকে হাউজ চেক বলা হয়। এতে বাসা ভেতরের পরিস্থিতি জানা যায়। পাশাপাশি ওই বাসার মানুষজন কিভাবে মশা নিধন করতে হয় তা শিখে যায়। এতে বাসাবাড়ির লোকজন উৎসাহী হয় এবং তারা সহযোগিতাও করেন।’

 

সাইফুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন টিমের মাধ্যমে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গিয়ে এডাল্ট মশা ও লার্ভার অভিযান চালানো দরকার।

 

কিন্তু পরিবেশবান্ধব যে ধরনের কীটনাশক দেওয়ার কথা সে ধরনের কীটনাশক নগরে বিভিন্ন জায়গা ছিটানো হচ্ছে না। এসব কীটনাশক বা ওষুধ ব্যবহার করলে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে থাকে। মাসে বেশ কয়েকবার ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি ফগিং করা। কিন্তু এসব কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।’

 

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণের আগ্রহ আছে, কিন্তু তাদের হাতে কোনো রকম উপায়-উপকরণ নেই। এ অবস্থায় জনসম্পৃক্ততার কথা বলে মাঠ দাপিয়ে জনগণের ঘাড়ে দোষ চাপালে স্বাস্থ্যব্যবস্থার কোনো উন্নতি হবে না।’

 

এই কীটতত্ত্বববিদ বলেন, ‘সাধারণত বিচ্ছিন্ন কিছু জরিপ চালিয়ে কিছু মশক প্রজননস্থল চিহ্নিত করা হয় এবং সেগুলোকেন্দ্রিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান চালিয়ে দায়িত্ব শেষ করা হয়।

 

কিন্তু এটি বছরব্যাপী কাজ। একটি বাড়িতে মশা পেলে তার আশপাশের বাড়িগুলোতে ব্যাপক অনুসন্ধানের মাধ্যমে ক্লাস্টারের বিস্তার বা পরিধি নির্ণয় করে মশক নির্মূল অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

 

আর একটি মশক ক্লাস্টার এক দিনের অভিযানে নির্মূল করা সম্ভব নয়। কারণ এডিস মশার এক ব্যাচ ডিম ১৫-২০ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে অবস্থা বুঝে অল্প অল্প করে লার্ভায় পরিণত হয়। তাই অ্যাক্টিভ ক্লাস্টার শনাক্ত করে সেখানে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা দরকার।’

 

প্রসঙ্গত, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মাসব্যাপী বিশেষ মশক নিধন অভিযান ৮ জুলাই থেকে শুরু হয়। বুধবার পর্যন্ত ১২ দিনে ১৬৩টি মামলায় মোট এক কোটি ১৪ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

 

ডিএনসিসির দশটি অঞ্চলেই একযোগে এই অভিযান পরিচালনা করছে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ। জুলাই মাসজুড়ে এই অভিযান চলবে।

 

অন্য দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এক মাসের বেশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২৬৪টি মামলায় ৩৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে। আগে ডেঙ্গু অভিযানে এই জরিমানার টাকা কম করে সতর্ক করলেও ইদানীং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভ্রাম্যমাণ আদালতে এই জরিমানার টাকা বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

এদিকে ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ১৭ দিনের জন্য সপরিবার বিদেশ সফরে গেছেন। গত ১৩ জুলাই (বৃহস্পতিবার) তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন।

 

মেয়রের এই ভ্রমণ নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৪ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ১৭ দিন পারিবারিক ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যুক্তরাজ্য, স্পেন, ডেনমার্ক ও সেনজেনভুক্ত অন্যান্য দেশ ভ্রমণ করবেন।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে ঢাকার দুই মেয়রের আরও কার্যকর ভূমিকা দেখতে চায় নগরবাসী। মশক নিধন কার্যক্রমে সামনে থেকে দুই মেয়রের নেতৃত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে দক্ষিণ সিটির মেয়রের বিদেশ ভ্রমণকে নগরবাসী ভালো চোখে দেখবেন না।

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

 

এই পরিস্থিতিতে নগরে মশক নিধনের জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। যেসব ভবন বা প্রতিষ্ঠানে এডিস লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা ও অর্থ জরিমানা করছি।

 

মেয়রের বিদেশ ভ্রমণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সবসময় মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তিনি আমাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। সে অনুযায়ী কাজ করছি।

 

তার বিদেশ ভ্রমণে আমাদের কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটছে না। বুধবার ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানে অংশ নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশনের কর্মীরা কোনো ভবনের ভিতরে বেজমেন্ট, বারান্দা ও ছাদের দায়িত্ব নেবে না। যার যার ভবনের দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে।

 

সেখানে এডিস মশার লার্ভা পেলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। এছাড়া সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বাসাবাড়িতে লার্ভা পাওয়ায় আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা জরিমানা করছেন। ডিএনসিসিতে অভিযান বাড়াতে আরও ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি।

ট্যাগ :

শেয়ার দিয়ে সাথেই থাকুন

নগরিকদের ওপর ব্যর্থতার দায় চাপাচ্ছে

পোষ্ট হয়েছে : ০১:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুলাই ২০২৩

প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। সারা দেশেই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। তবে রাজধানীতে এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। বুধবার রাজধানীতে ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর চলতি বছর (শুক্রবার পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকার দুই সিটিতে মারা গেছেন ১২২ জন। এ সময় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১৭ হাজার ৬৪৬ জন।

 

এই পরিস্থিতিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি। বরং লোক দেখানো কিছু কার্যক্রম করে বিতর্কিত হচ্ছে দুই সিটি। জরিমানা করে ব্যর্থতার দায় চাপাচ্ছে নগরবাসীর ওপর। দুই সিটির মশক নিধন অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় কোটি টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে।

 

কীটতত্ত্ববিদরা বলেছেন, আগে থেকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় বর্তমানে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এছাড়া সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে ব্যর্থ হচ্ছে দুই সিটির নানা উদ্যোগ। কীটতত্ত্ববিদদের মতে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মশক বিভাগকে ঢেলে সাজানো দরকার।

 

বছরের শুরুতে বিশেষ পরিকল্পনা, অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ, নিয়মিত মশার ঘনত্ব জরিপ, মশক কার্যক্রম তদারকি ও মূল্যায়ন এবং কীটনাশকের কার্যকারিতা পরীক্ষার নিয়মিত উদ্যোগ প্রয়োজন। শুধু অর্থ জরিমানা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে।

 

এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষক ও কীটতত্ত্বববিদ ড. জি এম সাইফুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমরা ঢালাওভাবে জরিমানা করার পরামর্শ দেইনি। প্রত্যেক বাসাবাড়িতে যেভাবে জরিমানা করা হচ্ছে সেটি অযৌক্তিক।

 

এ ক্ষেত্রে বাসাবাড়ির মালিকরা সহযোগিতা করবে না। তাদের সহযোগিতা না পেলে দুই সিটির এই উদ্যোগ সফল হবে না। এতে পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাবে। সেজন্য ঢালাওভাবে জরিমানা না করাই ভালো।

 

তিনি বলেন, ‘বিশেষ অভিযানে প্রত্যেক বাসাবাড়িতে চেক করা দরকার। অন্যান্য দেশও এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। যেটাকে হাউজ চেক বলা হয়। এতে বাসা ভেতরের পরিস্থিতি জানা যায়। পাশাপাশি ওই বাসার মানুষজন কিভাবে মশা নিধন করতে হয় তা শিখে যায়। এতে বাসাবাড়ির লোকজন উৎসাহী হয় এবং তারা সহযোগিতাও করেন।’

 

সাইফুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন টিমের মাধ্যমে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গিয়ে এডাল্ট মশা ও লার্ভার অভিযান চালানো দরকার।

 

কিন্তু পরিবেশবান্ধব যে ধরনের কীটনাশক দেওয়ার কথা সে ধরনের কীটনাশক নগরে বিভিন্ন জায়গা ছিটানো হচ্ছে না। এসব কীটনাশক বা ওষুধ ব্যবহার করলে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে থাকে। মাসে বেশ কয়েকবার ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি ফগিং করা। কিন্তু এসব কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।’

 

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণের আগ্রহ আছে, কিন্তু তাদের হাতে কোনো রকম উপায়-উপকরণ নেই। এ অবস্থায় জনসম্পৃক্ততার কথা বলে মাঠ দাপিয়ে জনগণের ঘাড়ে দোষ চাপালে স্বাস্থ্যব্যবস্থার কোনো উন্নতি হবে না।’

 

এই কীটতত্ত্বববিদ বলেন, ‘সাধারণত বিচ্ছিন্ন কিছু জরিপ চালিয়ে কিছু মশক প্রজননস্থল চিহ্নিত করা হয় এবং সেগুলোকেন্দ্রিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান চালিয়ে দায়িত্ব শেষ করা হয়।

 

কিন্তু এটি বছরব্যাপী কাজ। একটি বাড়িতে মশা পেলে তার আশপাশের বাড়িগুলোতে ব্যাপক অনুসন্ধানের মাধ্যমে ক্লাস্টারের বিস্তার বা পরিধি নির্ণয় করে মশক নির্মূল অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

 

আর একটি মশক ক্লাস্টার এক দিনের অভিযানে নির্মূল করা সম্ভব নয়। কারণ এডিস মশার এক ব্যাচ ডিম ১৫-২০ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে অবস্থা বুঝে অল্প অল্প করে লার্ভায় পরিণত হয়। তাই অ্যাক্টিভ ক্লাস্টার শনাক্ত করে সেখানে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা দরকার।’

 

প্রসঙ্গত, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মাসব্যাপী বিশেষ মশক নিধন অভিযান ৮ জুলাই থেকে শুরু হয়। বুধবার পর্যন্ত ১২ দিনে ১৬৩টি মামলায় মোট এক কোটি ১৪ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

 

ডিএনসিসির দশটি অঞ্চলেই একযোগে এই অভিযান পরিচালনা করছে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ। জুলাই মাসজুড়ে এই অভিযান চলবে।

 

অন্য দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এক মাসের বেশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২৬৪টি মামলায় ৩৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে। আগে ডেঙ্গু অভিযানে এই জরিমানার টাকা কম করে সতর্ক করলেও ইদানীং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভ্রাম্যমাণ আদালতে এই জরিমানার টাকা বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

এদিকে ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ১৭ দিনের জন্য সপরিবার বিদেশ সফরে গেছেন। গত ১৩ জুলাই (বৃহস্পতিবার) তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন।

 

মেয়রের এই ভ্রমণ নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৪ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ১৭ দিন পারিবারিক ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যুক্তরাজ্য, স্পেন, ডেনমার্ক ও সেনজেনভুক্ত অন্যান্য দেশ ভ্রমণ করবেন।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে ঢাকার দুই মেয়রের আরও কার্যকর ভূমিকা দেখতে চায় নগরবাসী। মশক নিধন কার্যক্রমে সামনে থেকে দুই মেয়রের নেতৃত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে দক্ষিণ সিটির মেয়রের বিদেশ ভ্রমণকে নগরবাসী ভালো চোখে দেখবেন না।

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

 

এই পরিস্থিতিতে নগরে মশক নিধনের জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। যেসব ভবন বা প্রতিষ্ঠানে এডিস লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা ও অর্থ জরিমানা করছি।

 

মেয়রের বিদেশ ভ্রমণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সবসময় মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তিনি আমাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। সে অনুযায়ী কাজ করছি।

 

তার বিদেশ ভ্রমণে আমাদের কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটছে না। বুধবার ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানে অংশ নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশনের কর্মীরা কোনো ভবনের ভিতরে বেজমেন্ট, বারান্দা ও ছাদের দায়িত্ব নেবে না। যার যার ভবনের দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে।

 

সেখানে এডিস মশার লার্ভা পেলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। এছাড়া সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বাসাবাড়িতে লার্ভা পাওয়ায় আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা জরিমানা করছেন। ডিএনসিসিতে অভিযান বাড়াতে আরও ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি।