একসঙ্গে আন্দোলন ও ভোটের প্রস্তুতি
- পোষ্ট হয়েছে : ০১:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৩
- / ৪৭ বার দেখা হয়েছে
প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু করেছে ছোট-বড় রাজনৈতিক দলগুলো। কেউ প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে, কেউ অপ্রকাশ্যে নির্বাচনি তৎপরতা চালাচ্ছে। বিরোধী দল মোকাবিলায় রাজপথে সরব ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ তাদের শরিকরা ঘোষণা দিয়েই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করেছে।
মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার একদফা দাবিতে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নিয়মিত উত্তাপ ছড়াচ্ছে। তবে তৃণমূলের চিত্র ভিন্ন। একক ভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় পার্টি।
‘শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয়’-কেন্দ্রের শীর্ষ নেতারা মুখে এমন কথা বারবার বললেও বিএনপিসহ তাদের শরিক দলগুলোর তৃণমূল নেতারা ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন নির্বাচনের।
আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি নির্বাচনি মাঠ গুছিয়ে রাখতে চান তারা, যাতে ভোটের লড়াইয়ে দিনশেষে পিছিয়ে পড়তে না হয়। প্রস্তুতি শুরু করলেও কেউ প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। এখনই স্বনামে তারা সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেও নারাজ। একটিই কথা, কাজ এগিয়ে রাখতে তারা স্থানীয়দের সঙ্গে নানা ধরনের বৈঠক করছেন। এগুলোতে ভোটসহ নানা বিষয়ই আলোচনা হচ্ছে। সবাই বুঝতে পারছে ভোটের প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু কেউ সরাসরি বলতে পারবে না, এভাবেই কৌশলে তারা কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।
সময়মতো ঘোষণা দেওয়া হবে। বিশেষ করে বিএনপির দীর্ঘদিনের সুহৃদ জামায়াতে ইসলামী এখন পুরোমাত্রায় নির্বাচমুখী তৎপরতা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য বিশেষ তহবিলও গঠন করছে। বসে নেই জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সিমাহীন ঊর্ধ্বগতিসহ জনজীবনের বিভিন্ন্ন সমস্যা সমাধানের দাবিতে রাজপথে নামবে তারা-এমন ঘোষণা দিয়েছে দলটি। পাশাপাশি চলছে তাদের নির্বাচনি প্রস্তুতিও।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের আর বেশি দিন বাকি নেই। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-নির্বাচন কমিশন (ইসি) এমন আভাস দিয়েছে। তারা নভেম্বরে তফশিল ঘোষণার প্রস্তুতি শুরু করেছে। শাসক দল আওয়ামী লীগ সংবিধানের ভেতরে থেকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রশ্নে অনড়।
এজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি। সর্বশেষ শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলের নেতাদের নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
দলগতভাবে প্রস্তুতির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ বিগত নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচনেও ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সম্প্রতি এই জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। একইসঙ্গে তিনি ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে যারা আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন তাদের বসে না থেকে পুরোদমে ভোটের প্রস্তুতি নিতে বলেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু রোববার যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের রাজনৈতিক দল। জনগণই আমাদের শেষ ভরসা। তাই নির্বাচনেই ভরসা রাখে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। রাজপথেও থাকতে বলেছেন। বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক অপরাজনীতি মোকাবিলায় আমরা এখন রাজপথে আছি। ঢাকাসহ সারা দেশে কর্মসূচি পালন করছি।
পাশাপাশি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় এবং বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণেরও প্রস্তুতি নিচ্ছি।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, আমরা জোটগতভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এর বাইরে রাজপথেও আছি। আমরা মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি-জামায়াত-জঙ্গিবাদসহ সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী অপশক্তি এবং তাদের অপরাজনীতি মোকাবিলায় আন্দোলন এবং নির্বাচন অতীতেও একসঙ্গে করেছি, আগামীতেও একসঙ্গে করব সেই প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছি।
আওয়ামী লীগসহ তাদের শরিকদের বিপরীতে বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের বলয়ে থাকা দলগুলোর চিত্র আবার ভিন্ন। বিএনপির সাফ কথা, বর্তমান সরকারের অধীনে তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না। একই সুর তাদের শরিক দলগুলোরও। তবে বিএনপিসহ তাদের শরিকদের তৃণমূলের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন্ন। দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা বসে নেই। সন্তর্পণে মাঠ গোছাচ্ছেন তারা। গতবারের মতো আগামীতেও যদি শেষ মুহূর্তে বিএনপি সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়, তখন যাতে পিছিয়ে পড়তে না হয়-এমন ভাবনা পেয়ে বসেছে দলটির মাঠের নেতাদের।
বিএনপির অন্যতম প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামী তো নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করেছে বলে দলটির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তারা বিভিন্ন আসনে প্রার্থী ঠিক করার পাশাপাশি নিয়মিত সভা-সমাবেশ করছে। নেতাকর্মীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছে। শুধু তাই নয়, নেতাকর্মীদের নির্বাচনি তহবিলে অর্থ সহায়তাও করতে বলা হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে থাকা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পাটি (এলডিপি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), গণঅধিকার পরিষদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্যসহ আরও কয়েকটি দল রাজপথে যেমন সক্রিয়, তেমনি ভোটের প্রস্তুতিতেও সক্রিয়।
অবশ্য নির্বাচনের বিষয়টি একেবারেই মাথায় নেই বলে দাবি করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এ প্রসঙ্গে তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমরা এই মুহূর্তে নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। আমাদের প্রধান চাওয়া বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা। তিনি বলেন, আমরা তো দেখেছি আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনের নামে কিভাবে প্রহসন হয়। দিনের ভোট কিভাবে রাতে হয়। মানুষের ভোটের অধিকার কিভাবে কেড়ে নেওয়া হয়। তারপরেও কিসের ভরসায় আমরা আওয়ামী লীগের অধীনে ভোটে অংশ নেব।
বিএনপি হয়ে লক্ষ্মীপুরের একটি আসন থেকে নির্বাচন করতে চান এমন এক নেতা প্রথমবার্তাকে বলেন, তিনিসহ দলটির তৃণমূলের অনেক নেতাই সরসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা বলছেন না। তবে নির্বাচনি এলাকার মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, গণসংযোগ, উঠান বৈঠকসহ নানা তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।
দল যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেবে, তখন তারাও প্রকাশ্যে ভোটের কথা বলবেন। আপাতত আন্দোলনকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ঢাকার বাইরে আরও একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা আপাতত সরকারবিরোধী আন্দোলনকে প্রাধান্য দিলেও ভোটের প্রস্তুতির বিষয়টিও মাথায় রেখেছেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির বলয়ে থাকা আট রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জোট গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম প্রধান শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রথমবার্তাকে বলেন, আমাদের কাছে নির্বাচনটা একটি আন্দোলনেরই অংশ। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছি।
তাই এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান মনোযোগ আন্দোলনের দিকেই। কারণ আন্দোলনে যদি সফল হতে না পারি তাহলে ভোটের অধিকার বলি কিবাং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলি-কোনো কিছুই আদায় করা সম্ভব হবে না। আবার এটাও ঠিক, আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতিও আমাদের বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-এ দুই ঘরানার বাইরে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি আপাতত এককভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এজন্য তারা ভোটের একটি রোডম্যাপও তৈরি করেছে। চলছে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ। একদিকে দলকে সুসংগঠিত করা, অন্যদিকে নির্বাচনি প্রস্তুতি-সমানতালে দুটোই করছে জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি।
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি রোববার প্রথমবার্তাকে বলেন, আমরা আপাতত এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছি। তিনি আরও বলেন, জোট গঠন বা কারও সঙ্গে জোটে যাওয়ার বিষয়টি আপাতত আমাদের মাথায় নেই। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে।