
পুঁজিবাজার চায় কালোটাকা, করপোরেট করে ছাড় চায় ব্যাংক
পোষ্ট হয়েছে : সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক:বিনিয়োগের সুযোগ তৈরিতে ব্যাংক খাতের করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব করেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)।
আর নির্দিষ্ট হারে করে দেয়া সাপেক্ষে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন না তোলার বিধান ফের চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাব দেয়া হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সভায় সভাপতিত্ব করেন।
বিএবি প্রতিনিধি মিজান চৌধুরী বলেন, ব্যাংক ঋণ উদ্ধার করতে গিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গিয়ে ব্যাংকগুলো বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ঋণের অর্থ উদ্ধারের যে ব্যয় হয়, সেই ব্যয়কে গ্রহণযোগ্য ব্যয় হিসেবে মেনে নিতে বাজেটে নির্দেশনা চান তিনি।
ব্যাংকের মোট ব্যয়ের প্রায় এক শতাংশ হলো ঋণের অর্থ উদ্ধারের ব্যয়। সিএসআর কার্যক্রমকে করমুক্ত রাখার সুপারিশ করে তিনি বলেন, বেসরকারি ৩৮টি ব্যাংক প্রতি বছর ন্যূনতম ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার সিএসআর কার্যক্রম করে থাকে।
সিএসআরকে ব্যয় বা খরচ হিসেবে মেনে নেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত শূন্য, দ্বিতীয় ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ, তৃতীয় ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ, চতুর্থ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ ও পঞ্চম ৩৫ লাখ টাকা বা তার উর্ধ্বে ২৫ শতাংশ হারে কর নির্ধারণের সুপারিশ করেন তিনি।
করপোরেট কর কমানোর বিএবি’র প্রস্তাবনায় বলা হয়, বর্তমানে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সাড়ে ৩৭ শতাংশ ও অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংকের করপোরেট কর ৪০ শতাংশ।
বিদেশি বিনিয়োগের হিসাব করলে করপোরেট করহার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। ব্যাংক খাতে বিভিন্ন খাতে কর কর্তন করা হয়। এছাড়া আয়ের ওপর করপোরেট কর কর্তন করা হয়।
এতে ডাবল ট্যাক্স হয়ে যায়। ব্যাংক খাত দেশের বেসরকারি খাত এবং জিডিপিতে অবদান রাখছে। সেজন্য ব্যাংক খাতের করপোরেট কমানোর সুপারিশ করা হয়।
চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম ফারুক বলেন, অর্থ আইন, ২০২২ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হারে কর দিলে বিনিয়োগকৃত অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার বিধানটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বিধানটি আবার চালু করা যেতে পারে। বিধানটি রাখা হলে বিভিন্ন শ্রেণির করদাতারা তাদের বৈধ উপায়ে উপার্জিত অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এতে পুঁজিবাজারে গতিশীলতা ও সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির সঙ্গে টাকা পাচারের ঝুঁকিও হ্রাস পাবে। এছাড়া তিনি কোম্পানি শেয়ারের লভ্যাংশ থেকে উৎসে কর কর্তনের বিধান বাতিল করা, ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত লভ্যাংশ ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা, জিরো কুপন বন্ডের অন্য বন্ডের আয়কে কর অব্যাহতি দেয়া ও ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেন।
ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান জিরো কুপন বন্ডের মতো অন্য বন্ডগুলো থেকে উদ্ভূত আয়কে ও কর অব্যাহতি দেয়া, লভ্যাংশের ওপর দ্বৈত কর প্রত্যাহার করে উৎসে যে কর কর্তন করা হয় সেটাকে চূড়ান্ত হিসেবে নির্ধারণ করা এবং করপোরেট শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষেত্রে লভ্যাংশের কর হার ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের পার্থক্য ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ করা, স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের বা ট্রেক হোল্ডারদের কাছ থেকে উৎসে আয়কর কর্তনের হার পূর্ববর্তী শূন্য দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্তিতে এসএমই কোম্পানীগুলোর জন্য রেয়াতি হারে কর নির্ধারণ করা। সেক্ষেত্রে তালিকাভুক্তির পাঁচ বছর পর থেকে ১০ শতাংশ করহার নির্ধারণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া শেয়ার লেনদেন থেকে স্টক ডিলারদের যে আয় হয় সেটা করমুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ইমাম শাহীন বলেন, বিমা আইনে জীবন বিমা পলিসির প্রিমিয়ামের কোনো ভ্যাট দেয়া লাগে না। এককভাবে স্বাস্থ্যবিমা করলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। কিন্তু কোনো বিমাগ্রহীতা জীবন বিমার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিমা যুক্ত করে পলিসি করলে স্বাস্থ্যবিমার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এতে প্রিমিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। স্বাস্থ্যবিমার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে, এর ওপর ট্যাক্স রহিত করার প্রস্তাব করছি। এছাড়া জীবন বিমা পলিসি হোল্ডারদের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ ট্যাক্স প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. রিয়াদ মতিন তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহারের পার্থক্য ১৫ শতাংশ করা, মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট করহার ২৫ শতাংশ করা, পুঁজিবাজারের গতিশীলতা আনয়নে লভ্যাংশের ওপর কর প্রত্যাহার ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির ভ্যাট হ্রাস করে ১০ শতাংশ করার সুপারিশ করেন।