প্রথমবার্তা, প্রতিবেদক: প্রায় ১২ বছর ধরে নাগালের বাইরে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মাস্টারমাইন্ড চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া। সম্প্রতি আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডের ২ আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার পর আবার আলোচনায় এসেছে তার নাম। নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, তাকে খুঁজে না পাওয়া আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ব্যর্থতা।

২০১৩ থেকে ২০১৬- এই ৪ বছরে একে একে হত্যা করা হয় প্রকাশন দীপন, বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়, রাজীব হায়দারসহ ৯ ব্লগার-অধিকারকর্মী। তদন্তে সবগুলো ঘটনায়ই আনসারউল্লাহ বাংলাটিমের সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ।

গোয়েন্দারা জানতে পারেন, এসব হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া। হলি আর্টিজানসহ বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলায় সামনে আসে জিয়ার নাম। এক পর্যায়ে তাকে ধরতে দেশে ২০ লাখ টাকা আর যুক্তরাষ্ট্রে পুরস্কার ঘোষণা করা হয় ৫০ লাখ ডলার।

এতসবের পরও প্রায় এক যুগ ধরে পলাতক এই ব্যক্তি। সম্প্রতি আদালত চত্বর থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় দীপন হত্যার দুই মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিকে। এ ঘটনায় দায়ের মামলার এজাহারেও বলা হয়েছে, এই জঙ্গি ছিনতাই সেই জিয়ারই নির্দেশে।

সিটিটিসি বলছে, জিয়াকে ধরতে খুব কাছাকাছি গিয়েও তারা ব্যর্থ হয়েছে চারবার। ময়মনসিংহ, কুমিল্লার পর ২০১৯ সালের মার্চ ও জুনে তাকে দেখা গেছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে। তবে এখন কোথায় সে কোথায় আছে তা জানার চেষ্টা চলছে।

ডিএমপির সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চলছে। অবস্থান জানা মাত্রই অপারেশন চালিয়ে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করব।

এদিকে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যদের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণ ও আত্মগোপনের খবরে র‍্যাবের ধারণা জিয়াও সেখানেই আছেন।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা এখন অভিযান পরিচালনা করছি। সেখানে কিন্তু একজন মানুষের আত্মগোপনে থাকা খুবই সহজ। নাম-পরিচয় গোপন করে তারা আত্মগোপনে থাকছেন। জঙ্গি জিয়া হয়তো এভাবেই আত্মগোপনে থাকতে পারে।

তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেশে থাকার পরও জিয়াকে শনাক্ত করতে না পারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা। তাকে ধরতে না পারলে, পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না জঙ্গি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ বলেন, আমরা যেটা দেখছি তার যে অস্তিত্ব সেটা তো আছে। যদি সে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে থাকে তাহলে তাকে গ্রেপ্তারের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। আমি মনি করি না ধরতে পারার কোনো কারণ নেই।

২০১১ সালের ডিসেম্বরে সেনা অভুত্থানের চেষ্টার দায়ে চাকরিচ্যুত হন মেজর জিয়া। ২০১৩ সাল থেকে তিনি জঙ্গিবাদে যুক্ত হন বলে তথ্য দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।