1. [email protected] : bijoy : bijoy Book
  2. [email protected] : News Room : News Room
  3. [email protected] : news uploader : news uploader
  4. [email protected] : prothombarta :
এক বীর সেনার প্রস্থান, কিছু অমীমাংসিত প্রশ্নও আমাদের দায়
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪৮ দিন

এক বীর সেনার প্রস্থান, কিছু অমীমাংসিত প্রশ্নও আমাদের দায়

  • পোষ্ট হয়েছে : বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০২৩

মোঃআক্তারুজ্জামান: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত স্নাতক (পাস),দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব প্রাপ্ত হওয়ায় রামদিয়া সরকারি শ্রীকৃষ্ণকলেজ, কাশিয়ানী, গোপালগঞ্জ কেন্দ্রে বসেই একমনে কাজ করছিলাম।

 

হঠাৎ, কানে ভেসে এলো বারবার প্রচার হতে থাকা একটি শোক সংবাদ।সদা বেদনাময় এই সত্যকে কখন ও অস্বীকার করা যায় না, তবুও মোটেও প্রস্তুত ছিলামনা সংবাদটি শোনার জন্য।

 

মুহূর্তের মধ্যে মনে হতে লাগলো একজন স্বজনকে হারিয়ে এক অচ্ছেদ্য বিষন্নতায় আটকা পড়ে গেছি। আসলে এই ভালোবাসার বাংলাদেশটিই তার প্রিয় এক বীর সন্তানকে হারিয়ে আরো অসহায় হয়ে পড়লো।পরাধীনতার শেকল থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে যে কয়েকজন ‘খাঁটি’ দেশ প্রেমিক হায়েনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম।

 

তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইদ্রিস আলী মিয়া। সরকারি রাম দিয়া শ্রী কৃষ্ণ কলেজের সাবেক এই গর্বিত ছাত্র কলেজের যে কোন অনুষ্ঠানে আসতেন তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাতে, দেশটার জন্য ভালোবাসার মায়াময়তা বিজানাতে, অন্যায়, অসত্য, দুর্নীতি, আর দেশ দ্রোহী শক্তির বিরুদ্ধে ক্ষোভ আর ঘৃণা জানাতে ও বিলাতে।

 

একই মঞ্চে বসে তাঁর কথা গুলো শুনতাম নির্বাক স্রোতা হয়ে।গত ২৬ মার্চ শেষবার তিনি এসেছিলেন, বিদায়ের সময় হাতেহাত রেখে দেশটিকে তাঁর ও আমাদের ভাবনা এবং ভালোবাসার কথা বলেছিলাম আমরা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে আমার বিভাগে তাঁকে নিমন্ত্রণ ও জানিয়ে রাখলাম – শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম ও নৈতিকতার শোনানোর জন্য, নিজে ও শুনে সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য।

 

তিনি নিমন্ত্রণ গ্রহণ ও করেছিলেন কিন্তু তখন বুঝিনি আর দেখা হবেনা, ওটাই শেষ কথা! সেদিনের সেই বক্তব্যে তিনি কিছু প্রশ্ন রেখেছিলেন যা বুকের মাঝে যন্ত্রণার তীর হয়ে বিঁধে আছে।জানিনা সমগ্র জাতি মিলে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে পারবো কিনা।

 

তাঁর প্রথম প্রশ্ন ছিল, “আজকের কাশিয়ানী উপজেলায় যে পরিমাণ সনদ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা তার মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ সহযোদ্ধা একাত্তর সালে দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি – নেতৃত্বে থাকার সুবাদে তাদের সবাইকে আমি চিনতাম।”

 

তিনি জানতে চাইলেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার বাইরে অতিরিক্ত আরো দ্বিগুণ কোথা থেকে এলো? তিনি আরো জানালেন, যে পরিমাণ তালিকা ভূক্ত মুক্তি যোদ্ধা রয়েছেন তার চেয়ে ও বেশী আবেদন এখনো রয়েছে যাচাই – বাছাই প্রক্রিয়ায়।তাঁর প্রশ্ন, “এত মুক্তিযোদ্ধা কীভাবে এলো?”

 

বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রদ্ধেয় মোঃ ইদ্রিস আলি মিয়া বলছিলেন, ১৯৭১সালের সেই যুদ্ধ জয়ের পর তাঁরা কোন ভাবেই অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি।যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পে একজন সহযোদ্ধার ২৫টাকা চুরি হয়ে যায়।বিভিন্ন ভাবে সেটি উদ্ধারের চেষ্টা করে ও পাওয়া যায়নি।গোপনীয় তথ্যের ভিত্তিতে তিনি ‘চোর’ সনাক্ত করলেন।বিচার বসানো হলো।

 

দোষী ব্যক্তি, যিনি নিজে ও জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন, তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হলো।কিন্তু তিনি সন্তোষ জনক জবাব দিতে পারেননি।সঙ্গে সঙ্গে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। কেন জানিনা সেদিন তিনি খুব কাঁদছিলেন।

 

হয়তো সেদিনটাই তাঁর সাথে আমাদের আয়োজন করে শেষ বার কথা হবে এজন্যই এভাবে দরদদিয়ে বলে গেলেন। সেদিন তিনি যেমন কেঁদেছেন এবং সাথেসাথে আমাদের চোখও ভিজিয়ে দিয়ে গেছেন।  একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, নিষ্ঠুর শত্রুরা যার বজ্র কঠিন মুষ্ঠির ঝাঁকিতে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে সেই বীরের কণ্ঠে বিষাদ আর চোখে হতাশার অশ্রু সত্যিই বড়ো অসহায় করে দিচ্ছিল আমাদের।

 

তিনি কাঁদছিলেন, আর বলে চলছিলেন, “মাত্র ২৫ টাকার জন্য একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ক্ষমা করিনি কারণ তার হাতে এই কষ্টার্জিত মায়ের ভূমিকে, এই সোনার দেশটিকে নিরাপদ মনে হয়নি।

 

কিন্তু আজ সেই আমাদেরই সামনে দিয়ে ২৫হাজার কোটি টাকা চুরি হচ্ছে, মিলিয়ন মিলিয়ন কোটি টাকা চুরি হচ্ছে, এইমা’কে বিকিয়ে দিয়ে বেগম পাড়া, সেকেন্ড হোম তৈরী হচ্ছে বিদেশের মাটিতে কিন্তু আমরা অসহায়।”

 

তিনি প্রশ্ন রেখে গেলেন জীবন বাজি রেখে কি এ জন্যই যুদ্ধ করেছি? তিনি উপমা দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, “যখন কেউ ভালোবেসে প্রিয়জনের জন্য একটি ফুলনিয়ে আসে, তার সমস্ত কষ্ট সার্থক হয় যদি প্রিয়জন বা সাধনার মানুষ গুলো সেই ফুলটিকে ভালোবেসে গ্রহণ করে। পথের ক্লান্তি, দুর্জনের দেয়া কষ্ট আর শতপ্রতিকূলতা ও তখন সুখের মনে হয়।

 

কিন্তু যে মানুষটি বা মানুষ গুলোর জন্য জীবনের এত আয়োজন তারা যদি সেই ফুলটিকে পদদলিত করে তবে শত্রুর অত্যাচার, রক্তঝরা পথের আঘাত বা জীবন বাজি রাখার কষ্ট গুলো ও অনেক কম মনে হয় প্রিয়জনদের দেয়া সেই বিষময় আচরণের কাছে।

 

তিনি বুঝিয়ে গেলেন আমরা তাঁর সেই প্রিয়জন, যাদের জন্য জীবনকে তুচ্ছ করে বাংলাদেশ নামক একটি ফুলকে উপহার হিসেবে নিয়ে এসেছন।

 

আজ দেশের প্রতি আমাদের উদাসীনতা, মমত্ববোধের অভাব, দুর্নীতি আর অনাচারের কাছে দেশকে বিকিয়ে দেয়া তাঁর কাছে সেই ফুলটিকে পদদলিত করার সমানই মনে হয়েছে।

 

 

জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অগ্রনায়ক আমাদের উদ্দেশ্য করে জানতে চাইলেন, “এক বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে, যৌবনের সমস্ত উচ্ছলতাকে বিসর্জন দিয়ে, রাক্ষসের রক্ত চক্ষুর কাছে জীবনী শক্তি ক্ষয় করে একটি কাঁটা যুক্ত অথচ নিষ্কলুষ সুরভিত গোলাপ আপনাদের হাতে তুলে দিয়ে গেলাম। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এই ফুলের সৌরভ কি আপনারা পৌঁছে দিতে পারবেন?

 

আমরা ও আপ্লুতহই, এই ফুলের গন্ধ শুধু পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়া নয়, সারা ভুবনে বিলাতে ও প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হই। কিন্তু যখন সেই ফুলের সাথে থাকা কাঁটা গুলোর বিষাক্ত আঘাতে আমরা নীল হয়ে যাই, আমাদের জীবনী শক্তিকে নিস্ক্রিয় করে  দেয় তখন বিস্তৃণ আকাশের দিকে অপলক তাকিয়ে মনে রগহীনে মহাজগতের এক চ্ছত্রঅধিপতির কাছে আমরা ও প্রশ্ন রেখে চলে যেতে চাই- কতটা বিষের আঘাতে হতে হবে নীল,  আর কতটা দিতেহবে রক্ত? কতটা নিষ্পাপ প্রাণের বিনিময় হলে এদেশ হবে অভিশাপ থেকে মুক্ত?

 

কিন্তু যখন সেই ফুলের সাথে থাকা কাঁটা গুলোর বিষাক্ত আঘাতে আমরা নীল হয়ে যাই, আমাদের জীবনী শক্তিকে নিস্ক্রিয় করে
দেয় তখন বিস্তৃণ আকাশের দিকে অপলক তাকিয়ে মনে রগহীনে মহাজগতের এক চ্ছত্রঅধিপতির কাছে আমরা ও প্রশ্ন রেখে চলে যেতে চাই- কতটা বিষের আঘাতে হতে হবে নীল,  আর কতটা দিতেহবে রক্ত?  কতটা নিষ্পাপ প্রাণের বিনিময় হলে এদেশ হবে অভিশাপ থেকে মুক্ত?

 

লেখক: মোঃআক্তারুজ্জামান (বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য)
সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ
রামদিয়া সরকারি শ্রীকৃষ্ণ কলেজ, গোপালগঞ্জ
ই-মেইল: [email protected]

Facebook Comments Box

শেয়ার দিয়ে সাথেই থাকুন

print sharing button
এ বিভাগের অন্যান্য খবর